বিশ্ব

গাজায় ক্ষুদার্থ রোগীদের ভয়াবহ অবস্থা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকরাই

Advertisement

গাজার হাসপাতালে এখন এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। ক্ষুধার যন্ত্রণা আর যুদ্ধের ধাক্কায় অসংখ্য রোগী ও আহত মানুষ হাসপাতালে ঢলছে। কিন্তু চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, রোগীদের এই ভয়াবহ শারীরিক অবস্থা দেখে অনেক চিকিৎসকই শারীরিক ও মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। গাজার খাদ্যাভাব ও ওষুধ সংকটের ভয়াল রূপ এখন পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।

গাজায় খাদ্যসংকটের ভয়াবহতা

ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ এবং ধারাবাহিক হামলার কারণে গাজা উপত্যকায় খাবার ও পানি প্রায় অপ্রাপ্য হয়ে গেছে। রাস্তায়, আশ্রয়কেন্দ্রে এবং হাসপাতালে ক্ষুধার্ত মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে— এমন দৃশ্য এখন প্রতিদিনের ঘটনা। সামান্য খাবার কিনতেও লাগছে আকাশছোঁয়া দাম, অথচ অধিকাংশ মানুষের হাতে কোনো কাজ নেই, নেই উপার্জনের সুযোগ।

রাইদ আল-আথামনা নামের গাজাবাসীর ভাষায়, “সারাদিন শুধু ভাবি আজ পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করতে পারবো কি না। রুটি আর আটা তো দূরের কথা, আজ সামান্য ডাল কিনতে পেরেছি। কিন্তু কাল কী খাবো জানি না।”

চিকিৎসকরা ভেঙে পড়ছেন মানসিক চাপ ও দৃশ্যের ভয়ে

শুধু সাধারণ মানুষই নয়, চিকিৎসকরাও এই পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন ক্ষুধা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের শরীরের দুরবস্থা দেখার ফলে তাদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকরাই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত মানবিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

হাসপাতালের করিডোর, মেঝে, এমনকি সিঁড়ি পর্যন্ত ভর্তি ক্ষুধার্ত রোগীতে। যাদের শরীরে পুষ্টির অভাবে ক্ষত শুকাচ্ছে না, শিশুদের মুখে পানি ছাড়া আর কিছু নেই। গাজায় কাজ করা এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা ডাক্তার হয়েও এখন অসহায়। শুধু চিকিৎসা নয়, খাবার দিতে না পারার যন্ত্রণাটা আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

মানবিক সংকট চরমে

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই পরিস্থিতিকে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা জানাচ্ছে, গাজার ৮৮ শতাংশ এলাকা এখন সেনা নিয়ন্ত্রিত বলে চিহ্নিত, ফলে ত্রাণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খাবারের পাশাপাশি ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রীও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছাতে পারছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা মানবিক সংকটের পাশাপাশি মানবজাতির জন্য এক কলঙ্কজনক ঘটনা। এক তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন টানা না খেয়ে থাকছে, শিশুরাও এর বড় ভুক্তভোগী।”

গাজায় জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান এখন এক টুকরো রুটি

এই বছরের শুরু থেকেই খাদ্য সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী, অনাহারে অন্তত ৪৮ জন মানুষ মারা গেছেন। বছরের শুরু থেকে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯-এ।

ইসরায়েল সীমিত কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে দিলেও তা মানুষের চাহিদার তুলনায় সামান্য। কৃষিজমির অধিকাংশকেই সামরিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয় শিবিরে ঠাসাঠাসি করে থাকা মানুষদেরও নিরাপত্তা নেই, মাঝে মাঝেই হামলার কারণে সেখান থেকে সরে যেতে হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

রাইদ আল-আথামনা জানান, “প্রতিদিন চারপাশে হামলা চলছে। কোথাও বোমা, কোথাও গুলিবর্ষণ। নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই। মানুষ খিদের জ্বালায় রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে। আমি নিজে চোখে দেখেছি, লোকজন ধপ করে পড়ে যাচ্ছে।”

একসময় বিদেশি সাংবাদিকদের গাড়ি চালাতেন আথামনা। কিন্তু ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে না দেওয়ায় এখন তার কোনো কাজ নেই। বেকারত্ব ও খাদ্যসংকট মিলে তার পরিবার ভয়ংকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

কী হতে পারে সামনে

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার এই মানবিক সংকট যদি অবিলম্বে সমাধান না করা হয়, তবে আগামী দিনে শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুহার আরও বেড়ে যাবে। ত্রাণ সামগ্রী এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের পর্যাপ্ত সরবরাহ ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক মহল ইতোমধ্যেই গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক করিডর তৈরির আহ্বান জানাচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সাহায্যের হাত আসবে কবে এবং আদৌ কি এই যন্ত্রণা শিগগিরই শেষ হবে?

এম আর এম – ০৫২৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button