বিশ্ব

এক ঘণ্টায় ৩০ বার বিমান হামলা গাজায়

গাজায় ইসরায়েলের স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে এই হামলা আরও তীব্র হয়েছে। ট্যাংক, বিমান, কামানসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই চলছে এই হামলা, যার লক্ষ্য গাজাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েল ১৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যাতে ১৪৪ জন নিহত হয়েছে। সোমবার এক ঘণ্টার মধ্যে ৩০ বার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আল-জাজিরা এবং এএফপি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলি সেনারা গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনুসের বেসামরিক নাগরিকদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের আবাসন এবং বানি সুহাইলা পাড়ায় বসবাসকারীদের জন্য জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নতুন আদেশ জারি করা হয়েছে। সেখানে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলোতেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা।

সোমবার নুসিরাতের বাস্তুচ্যুতদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনস জানিয়েছে, ইসরায়েল রাতের বেলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে অবস্থিত নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের গুদামে আঘাত করেছে। এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটেছে যখন অন্যান্য হামলায় নিহত ও আহত ফিলিস্তিনিদের হাসপাতালে আনা হচ্ছিল।

চলমান হামলার মধ্যেই সোমবার এক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে সীমিত আকারে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।’ তবে ত্রাণ সাহায্য কবে থেকে পৌঁছানো হবে, সে বিষয়ে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাননি।

এদিকে, ইসরায়েলি জিম্মি ফেরতের বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কাতারের দোহায় আলোচনার সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল ধারণা করছে, গাজায় এখনো ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যার মধ্যে ২০ জনকে জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর এই ঘোষণার আগেই ইসরায়েল গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে। স্থল অভিযান এমন এক সময়ে শুরু হলো, যখন কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ শান্তি আলোচনা কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি বলে দুই পক্ষের সূত্র জানিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে কমপক্ষে ৫৩,৩৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১২১,০৩৪ জন আহত হয়েছে। সরকারি মিডিয়া অফিস অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এরও বেশি।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ৯২ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সংস্থাটি এক্স পোস্টে জানিয়েছে, ছিটমহলের পরিবারগুলো যে ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হচ্ছে তা ‘অকল্পনীয়’। অগণিত মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং আশ্রয় পাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button