বিশ্ব

হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দুই দিক থেকে নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। একদিকে গাজার উপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে হামাস নতুন এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, অন্যদিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে, যার ফলে ওই বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

হামাসের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

গতকাল শনিবার দোহায় কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আয়োজিত আলোচনায় হামাস এক নতুন প্রস্তাব দেয়, যাতে বলা হয়েছে, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে তারা তাদের হাতে থাকা অন্তত ৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত।

এই প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজায় ৪০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি, চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে রোগী সরানোর সুযোগ এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি দাবি করা হয়েছে। এই নতুন প্রস্তাব ইসরায়েলের গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই আসে।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও বর্তমান অবস্থান

ইসরায়েল এই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। তবে তারা পূর্বেই জানিয়েছিল, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার বা যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি তারা দেবে না। ফলে হামাসের প্রস্তাবে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকছে না বলেই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি

গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে চালানো ‘অপারেশন গিদিওনস চ্যারিয়ট’-এর মাধ্যমে গাজার উত্তর ও দক্ষিণের হাসপাতালে, শরণার্থীশিবিরে ও আবাসিক এলাকায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। শুধু গত তিন দিনে ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উদ্ধারকারীরা।

গাজার বাস্তবতা: খাদ্য ও চিকিৎসার সংকট

বিবিসির সাংবাদিক গাদা আল কুর্দ গাজা থেকে জানিয়েছেন, খাবার অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল হওয়ায় তার পরিবার দিনে মাত্র একবার খাবার খাচ্ছে। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার অভিযোগ তুলেছেন, যা জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি সমর্থিত হয়েছে। গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষের মধ্যে এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি গাজায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন হামলা গাজার জনসংখ্যা ও অবশিষ্ট জিম্মিদের ওপর ভয়াবহ মানবিক প্রভাব ফেলবে

হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর সাময়িক বন্ধ

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইয়েমেনের ইরানসমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ হামলায় ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

ইসরায়েলের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ভূপাতিত করেছে। আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়। তবে হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক ক্ষয়ক্ষতি

চলতি মাসের শুরুতেও হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছাকাছি বিস্ফোরিত হয়। এতে একটি সড়ক ও একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েক ঘণ্টার জন্য বিমান চলাচল বন্ধ থাকে।

হুতিদের যুদ্ধের কারণ ও প্রতিক্রিয়া

হুতিরা বলছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশেই তারা এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরেই হুতিরা লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট ও পশ্চিমা জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছিল, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালায়।

তবে সম্প্রতি হুতিরা লোহিত সাগরে হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট আরও ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। গাজার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা থাকলেও ইসরায়েলের অনমনীয় অবস্থান এবং হুতিদের আঞ্চলিক হামলা পুরো অঞ্চলকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা, দ্রুত মানবিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক সমঝোতাই হতে পারে সহিংসতা বন্ধের একমাত্র পথ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button