
দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট বিশ্বে ছোট দল হিসেবেই পরিচিত নেপাল। তবে এবার সেই ধারণা ভেঙে দিলো তারা। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ হয়েও দুইবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নেপাল রচনা করেছে ইতিহাস। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্যারিবীয়দের মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে তারা।
ম্যাচের সারসংক্ষেপ
টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় নেপাল। ওপেনার আসিফ শেখের দারুণ ইনিংস (৬৮ রান) এবং সন্দীপ জোরার ঝলমলে ব্যাটিং (৬৩ রান) নেপালকে পৌঁছে দেয় লড়াকু স্কোরে। মাত্র ৬৬ বলে তারা যোগ করেন ১০০ রানের দুর্দান্ত জুটি।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৩ রান করে নেপাল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয়রা শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। একে একে উইকেট হারাতে থাকেন তাদের ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত ১৭.১ ওভারে মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বল হাতে নেপালের আদিল আলম ছিলেন আগুন ঝরানো। ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তুলে নেন ৪ উইকেট। কুশল ব্রুতেলও ৩ উইকেট শিকার করে দলের সাফল্যে বড় অবদান রাখেন।
প্রথম ম্যাচেও দাপট দেখিয়েছিল নেপাল
এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও নেপাল জয় পেয়েছিল ১৯ রানে। সেই ম্যাচে তারা ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৮ রান তোলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ১২৯ রানেই থেমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ফলে দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে নেপাল। এর মাধ্যমে প্রথমবার কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো তারা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুপস্থিত তারকারা
এ সিরিজে ক্যারিবীয়দের নিয়মিত অধিনায়ক শেই হোপসহ একাধিক তারকা খেলোয়াড় অংশ নেননি। ভারত সফরে টেস্ট সিরিজ থাকায় অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছিলেন না দলে। তবে তাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন ভরাডুবি মেনে নিতে পারছে না সমর্থকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল না হলেও নেপালের জয় কোনোভাবেই ছোট করে দেখা যাবে না। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় মানে মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যতে আরও বড় অর্জনের পথ তৈরি করা।
নেপালের ক্রিকেট: সংগ্রাম থেকে শীর্ষে
নেপালের ক্রিকেট যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। দেশটির ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা, অর্থনৈতিক সংকট, এবং অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় খেলায় পরিণত করা কঠিন ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং প্রতিভাবান তরুণদের উত্থান নেপাল ক্রিকেটকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বিশেষ করে আইসিসি’র সহযোগী দেশগুলোর টুর্নামেন্টে নেপাল সবসময়ই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের মতো নেপালও ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা শক্ত করছে।
তারকা খেলোয়াড়দের উজ্জ্বলতা
নেপালের এই সিরিজ জয়ে কয়েকজন খেলোয়াড় বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছেন—
- আসিফ শেখ: ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ইনিংস নেপালকে ভালো সংগ্রহ এনে দেয়।
- সন্দীপ জোরা: গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঝলমলে ব্যাটিং করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন।
- আদিল আলম: বল হাতে দুর্দান্ত স্পেল করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ-অর্ডার ধসিয়ে দেন।
- কুশল ব্রুতেল: নির্ভরযোগ্য বোলিংয়ে জিততে বড় অবদান রাখেন।
ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিক্রিয়া
এই ঐতিহাসিক জয়ের পর নেপালকে অভিনন্দন জানিয়েছে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ভক্তরা। অনেকেই বলছেন, নেপাল এখন আর কেবল সহযোগী দেশ নয়, বরং তাদের আছে টেস্ট মর্যাদা অর্জনের সম্ভাবনাও।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ESPNcricinfo বিশ্লেষণে লিখেছে, “নেপালের এই জয় প্রমাণ করে ক্রিকেট এখন সত্যিই গ্লোবাল খেলা। উন্নতির সুযোগ পেলে ছোট দেশগুলোও বড় দলকে হারাতে পারে।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নেপালের এই সাফল্য শুধু একটি সিরিজ জয় নয়; এটি দেশের ক্রিকেটের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই জয়ের পর নেপাল ক্রিকেট বোর্ড আরও স্পনসরশিপ, আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন এবং বিশ্বমানের কোচিং সুবিধা পেতে পারে।
যদি তারা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, তাহলে আগামী কয়েক বছরে বিশ্বকাপেও চমক দেখাতে পারে নেপাল।
নেপালের এই জয় শুধু ক্রিকেট ইতিহাস নয়, দেশের মানুষের মনোবল ও গর্বের প্রতীক। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তারা প্রমাণ করলো, ছোট দেশ মানেই ছোট স্বপ্ন নয়। শারজাহতে লেখা এই ইতিহাস ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্যের পথ তৈরি করবে।
MAH – 13075 I Signalbd.com