ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ সেনা নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন

২২ এপ্রিল ২০২৫-এ পেহেলগাম (ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর) এলাকায় পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়। ভারত অভিযুক্ত করে ‘অফলাইন জঙ্গি শিবির’ পাকিস্তান থেকে পরিচালিত, যার পরিণামে ভারতে নাগরিক নিহত হয় বলে দাবি করে mint। এর উত্তরে ৬ মে ভারতীয় বাহিনী চালায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যার নাম দেয়া হয় অপারেশন সিন্ডুর। নাইনটি-নাইন (৯) লক্ষ্যবস্তুতে দফায় দফায় হামলা চালানো হয় বলে ভারতীয় সামরিক সূত্রে জানা যায় Wikipedia।
পাকিস্তানের ইন্টার–সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) বলছে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ জন সদস্য শহীদ, ৭৮ জন আহত হন Dawn। একই সংঘাতে বেসামরিক বিভাগে নিহত ৪০ (৭ নারী, ১৫ শিশু) ও আহত ১২১ জনের খবর দেওয়া হয় Anadolu Ajansı।
বিড়ম্বনাকর মানবিক সংকট
- সামরিক ক্ষয়ক্ষতি:
- শহীদ: ১১ জন (সেনাবাহিনী ৬, বিমানবাহিনী ৫)
- আহত: ৭৮ জন Dawn
- বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি:
- নিহত: ৪০ জন (৭ নারী, ১৫ শিশু)
- আহত: ১২১ জন Anadolu Ajansı
পাকিস্তান আইএসপিআর বিবৃতিতে শহীদদের নাম ও পদবীও উল্লেখ করা হয়:
“নায়েক আবদুল রেহমান, ল্যান্সনায়েক দিলাওয়ার খান, ল্যান্সনায়েক ইকরামউল্লাহ, নায়েক ওয়াকার খালিদ, সিপাহী মুহাম্মদ আদিল আকবর ও সিপাহী নিসার পতাকা-প্রেমে প্রাণদান করেছেন।” Dawn
বিমানবাহিনীর বছরভূমিতে শহীদদের মধ্যে রয়েছেন স্কোয়াড্রন লিডার উসমান ইউসুফ, চিফ টেকনিশিয়ান আওরঙ্গজেব, সিনিয়র টেকনিশিয়ান নাজিব, করপোরাল টেকনিশিয়ান ফারুক ও সিনিয়র টেকনিশিয়ান মুবাশির Dawn।
‘অপারেশন সিন্ডুর’ ও ‘অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস’
অপারেশন সিন্ডুর
৬ মে ভারতী বাহিনী চালায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যার মধ্যে SCALP-বিস্ফোরক, AASM হ্যামার গ্লাইড বোমাসহ ব্রহ্মস ক্রুজ মিসাইল ব্যবহৃত হয় বলে অগণিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য Wikipedia। আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ইসলামাবাদ-সংলগ্ন দিয়ে সন্ত্রাসবাদী আস্তানা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যাতে শুধুমাত্র কৌশলগত ভিত্তি ভাঙা সম্ভব।
অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নাগরিকদের সুরক্ষা এবং প্রতিশোধ হিসেবে চালায় অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস, যার মাধ্যমে সীমান্তে সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক হামলা পরিচালিত হয় Dawn। আইএসপিআর বিবৃতিতে বলা হয়,
“শহীদদের আত্মত্যাগ জাতির স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে; আমাদের সার্বভৌমত্বে বিন্দুমাত্র আপস হবে না।” Dawn
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও যুদ্ধবিরতি
সপ্তাহখানেকের উত্তেজনার পর, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত শনিবার দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান,
“দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হলো আমাদের ‘শান্তি মিশনের’ ফল” Financial Times।
সামরিক সংঘাতের এই ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ পরবর্তী পর্যায়ে রূপ নিল রাজনৈতিক ভবন-দেওয়ালে আলোচনার চিন্তায়। ভারতীয় সরকার আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকে খানিকটা নাকচ করলেও, পাকিস্তান এ অবস্থাকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে উদযাপন করছে।
সার্বভৌমত্বের অটল ঘোষণা ও জাতীয় উদযাপন
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ১০ মে ‘ইয়াওম-এ-মার্কা-ই-হক’ (মুক্তিযুদ্ধ দিবস) হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যাতে সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। পাশাপাশি ১৬ মে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন ও মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের ঘোষণা দেন Dawn।
আইএসপিআর স্পষ্ট ঘোষণা দেয়,
“এ ধরনের আঘাত ভবিষ্যতে করার চেষ্টাও করলে, উত্তর হবে দ্রুত, সর্বাত্মক ও চূড়ান্ত।” Dawn
পর্যালোচনা: উত্তেজনার পেছনের ভূ-রাজনৈতিক কারণ
১. কাশ্মীর বিরোধ: দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত–উত্তেজনাপূর্ণ, সীমান্তের দুইপাশে হামলা ও পাল্টা হামলার ধারা।
২. আঞ্চলিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা: ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার—চীন-বান্ধব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের ভূ-রাজনৈতিক পালাবদল।
৩. ঘরোয়া রাজনীতি: উভয় দেশের শাসকদল নব নির্বাচন-প্রস্তুতিতে দৃঢ় ভাবমূর্তি গড়তে চায়—সীমান্ত সংঘাতে ‘স্বরাষ্ট্রমূলক’ রাজনীতির ব্যবহার Financial Times ও Al Jazeera।
মানবিক দূরদৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
- নাগরিক নিরাপত্তা: উভয় দেশের সীমান্তবর্তী লোকজন দিশেহারা—বাস্তবায়িত মনস্তাত্ত্বিক সন্ত্রাস, ক্ষয়িষ্ণু জীবনযাত্রা।
- আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ: জাতিসংঘ, জি-২০, ও অন্যান্য সংস্থা তামাদি সীমান্ত উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ।
- সন্ত্রাসবাদ দমন: উদাহরণস্বরূপ, আল কায়েদা-ই-ভারত ও লস্কর-ই-তৈয়বা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগের তাগিদ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে কাশ্মীর সমাধান ছাড়া এই ধরনের সংঘাত থেমে থাকবে না। উভয় শাসকশ্রেণিকে দরকার স্থায়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি–সামাজিক উন্নয়ন সহযোগিতা Financial Times।
ভারত ও পাকিস্তান—দুই পারমাণবিক রাষ্ট্রের সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সৈনিক-নাগরিক উভয় বিভাগেই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি। ১১ জন সৈনিক শহীদ, ৭৮ জন আহত, বেসামরিক বিভাগে ৪০ জন নিহত, ১২১ জন আহত এই উদ্ধৃত পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয়েছে ‘পারস্পরিক আস্থা’শূন্য এক বাস্তবতা DawnAnadolu Ajansı। দ্রুত যুদ্ধবিরতি এলেও, ভবিষ্যতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবসম্মত কূটনীতি ছাড়া উত্তেজনা হাতের নাগালে থাকবে—এ কথা সচেতন থাকতে হবে উভয় পক্ষকে।