বিশ্ব

ভারত-পাকিস্তানের ৮৭ ঘণ্টার সংঘাতে ক্ষতি ৮৭ বিলিয়ন ডলার

২০২৫ সালের ৭ মে রাত ১টা ৫ মিনিটে শুরু হওয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ৮৭ ঘণ্টার সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই সংঘাত, যা ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে শুরু হয়, কেবল সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং মানবিক ক্ষতির দিক থেকেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। মোট ৮৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মধ্যে ভারতের ক্ষতি পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় ২২ গুণ বেশি, যা এই সংঘাতের অসম প্রভাবকে তুলে ধরে। এই প্রতিবেদনে আমরা সংঘাতের বিস্তারিত ঘটনাপ্রবাহ, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।

সংঘাতের সূচনা: অপারেশন সিঁদুর

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু পর্যটক। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিশোধ হিসেবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে ভারতীয় বিমানবাহিনী ফ্রান্সের তৈরি দাসোঁ রাফায়েল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে, যা স্কাল্প ইজি (স্টর্ম শ্যাডো) দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং এএএসএম হ্যামার প্রিসিশন গ্লাইড বোমা দিয়ে সজ্জিত ছিল। এই অস্ত্রগুলো ৫৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।

ভারতের দাবি, এই হামলার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তইয়বার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের ঘাঁটি। তবে পাকিস্তান অভিযোগ করে, ভারতের হামলায় বেসামরিক স্থাপনা, মসজিদ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের পাল্টা জবাব

৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটগুলোর মাধ্যমে ভারতের হামলার জবাব দেয়। পাকিস্তান বিমানবাহিনী তাদের চেংদু জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে, যা পিএল-১৫ দূরপাল্লার আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং কোরাল ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত ছিল। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের তিনটি দাসোঁ রাফায়েল যুদ্ধবিমান এবং ১২টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। এই রাফায়েল বিমানগুলোর ক্ষতি ছিল এই প্ল্যাটফর্মের প্রথম নিশ্চিত যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষতি, যা বিশ্বব্যাপী সামরিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

পাকিস্তান তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক কাউন্টারমেজার, আকাশ প্রতিরক্ষা কামান এবং স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় ড্রোনগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এছাড়া, পাকিস্তান ১০ মে ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’ নামে একটি পাল্টা অভিযান শুরু করে, যার মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন শহরে হামলা চালানো হয়।

প্রযুক্তির ভূমিকা: ড্রোন যুদ্ধ

এই সংঘাতকে ইতিহাসে প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারত স্কাইস্ট্রাইকার এবং ইসরায়েলি হ্যারপ ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। এই ড্রোনগুলো কেবল হামলার জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের রাডার এবং ভূমি-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করার জন্যও ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তান তাদের ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেম এবং স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় ড্রোনগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই প্রযুক্তিগত যুদ্ধ আধুনিক যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে ড্রোন এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি: ভারতের বিপর্যয়

৮৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ধরে চলা এই সংঘাত ভারতের অর্থনীতিতে গভীর আঘাত হেনেছে। ভারতের নিফটি ৫০ এবং বিএসই সেনসেক্স সূচকগুলো মিলিয়ে ৮২ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন হারায়। উত্তর ভারতের আকাশপথ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক বিমান ক্ষতি হয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) স্থগিত হওয়ায় টিভি স্বত্ব, টিকিট বিক্রি এবং বিজ্ঞাপন থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। সামরিক অভিযানে ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং তিনটি রাফায়েল যুদ্ধবিমানের ক্ষতিতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। পণ্য পরিবহন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ভারতের মোট ক্ষতি দাঁড়ায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কেএসই-১০০ সূচক ৪.১ শতাংশ কমে যাওয়ায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) স্থগিত হওয়ায় ১০ মিলিয়ন ডলার, আকাশপথ বন্ধ থাকায় ২০ মিলিয়ন ডলার এবং সামরিক অভিযানে দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ও ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। পাকিস্তানের মোট ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার।

মানবিক ক্ষতি

সংঘাতে উভয় দেশে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু এবং অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি, ভারতের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। ভারত-শাসিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ১৫ জন নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। মুজাফফরাবাদে একটি মসজিদ এবং মুরিদকে একটি শিক্ষা কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই সংঘাতে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীন উভয় দেশকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর তাগিদ দিয়েছেন।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

এই সংঘাত ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের শেয়ারবাজারের পতন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাসের ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতিও এই ক্ষতির প্রভাব গভীরভাবে অনুভব করবে।

আধুনিক যুদ্ধের এই ঘটনা দেখিয়েছে যে, যুদ্ধের ক্ষতি এখন আর কেবল সামরিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। শেয়ারবাজারের পতন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, সরবরাহ ব্যবস্থার ভাঙন এবং বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের মাধ্যমে এর প্রভাব অর্থনীতির গভীরে প্রবেশ করে। এই সংঘাত থেকে শিক্ষা নিয়ে উভয় দেশকে কূটনৈতিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button