বিশ্ব

ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব পুতিনের

Advertisement

তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ রোববার সকালে ক্রেমলিনে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে তিনি ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে সরাসরি ও শর্তহীন আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। আলোচনার স্থান হিসেবে তিনি প্রস্তাব করেছেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলকে। তবে ইউরোপীয় নেতাদের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সম্পর্কে পুতিন নিরবতা পালন করেছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

ইস্তাম্বুলে আলোচনার আহ্বান, কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে নীরবতা

ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব এমন এক সময় এল, যখন কিয়েভে ইউরোপের চার প্রভাবশালী দেশের—ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের নেতারা—এক যৌথ বৈঠকে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই বৈঠকটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থনে।

পুতিন বলেন, “আমরা কিয়েভ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা ২০২২ সালে যে আলোচনা ভেঙে দিয়েছিল, তা যেন আবার শুরু করে। আর আমি জোর দিয়ে বলছি—(এ আলোচনা হবে) কোনো শর্ত ছাড়াই।”

তবে এ সময় তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর যুদ্ধবিরতির আহ্বান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থানেরই ইঙ্গিত দেয়—তারা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে নিজেদের শর্ত বজায় রেখেই।

তুরস্ককে মধ্যস্থতার আমন্ত্রণ, গুরুত্ব পাচ্ছে ইস্তাম্বুল

পুতিন জানান, আগামী ১৫ মে ইস্তাম্বুলে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আলোচনার আয়োজনে সহায়তা চেয়ে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে শিগগিরই কথা বলবেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে ইস্তাম্বুলেই একাধিক রাউন্ড আলোচনা হয়েছিল, যদিও তা কোনো চুক্তিতে পৌঁছায়নি।

রাশিয়ার অবস্থান: ‘সংঘাতের মূল কারণ’ বনাম পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর মতে, “চলমান সংঘাতের মূলোৎপাটন করতে ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রস্তুত।”

মস্কো দাবি করে, সংঘাতের পেছনে ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থী কৌশল, ন্যাটোতে যোগদানের চেষ্টা এবং পূর্ব ইউক্রেনের রুশভাষী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার বিষয়টি অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এসব যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে বলছে, রাশিয়ার হামলা আসলে তার সাম্রাজ্যবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ।

যুদ্ধ পরিস্থিতি: কৌশলগত অগ্রগতি ও স্থবিরতা

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখন পর্যন্ত দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ। ২০২৫ সালের বসন্তে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ জোরদার করে, বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে।

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্র ও কিয়েভ যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দেয়, যা রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করে। মস্কোর ভাষ্য ছিল, পশ্চিমারা যদি কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করে, তবে যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা নেই।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও অনিশ্চয়তা

ইউরোপীয় নেতারা এই সংকটের সমাধানে কূটনৈতিক পদক্ষেপের ওপর জোর দিলেও রাশিয়ার পক্ষ থেকে সদিচ্ছা স্পষ্ট নয় বলেই বিশ্লেষকদের মত। পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা, পুতিন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও যুদ্ধবিরতির অনুপস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার কৌশলগত সুবিধা নেওয়ার অংশ হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার বক্তব্যে ‘সংঘাতের মূলোৎপাটন’ এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’ শব্দগুলো থাকলেও, বাস্তবে তা কেবল আলোচনার কৌশল হতে পারে—বিশেষ করে যখন ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থন কিছুটা নড়বড়ে হতে শুরু করেছে।

আলোচনার সুযোগ নাকি নতুন চাল?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুতিনের আলোচনার প্রস্তাবকে কিছু পর্যবেক্ষক ইতিবাচক বললেও, যুদ্ধবিরতির অনুপস্থিতি বড় প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন যদি আলোচনায় রাজি হয়, তবে ইস্তাম্বুল ফের আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তবে রাশিয়া অস্ত্র সংযত না করলে কিংবা পশ্চিমারা যদি ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ না করে, তবে স্থায়ী সমাধানের পথ অনেক দূর বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button