নেতানিয়াহুর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্নের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চরম উত্তেজনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমনটাই জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট মনিটর ও ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইসরায়েল হায়োম একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অসন্তোষ ও রাজনৈতিক দূরত্বকেই দায়ী করা হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে?
ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর সাংবাদিক ইয়ানির কোজিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে দাবি করেন,
“ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছে, নেতানিয়াহু তাঁকে কৌশলে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। এ কারণেই ট্রাম্প তার সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস বা ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু ইসরায়েলের ডানপন্থী দৈনিক ‘ইসরায়েল হায়োম’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে কোজিনের তথ্য হুবহু মিলে গেছে।
ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ কী?
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের কৌশলগতবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে ডারমার ট্রাম্পকে কী করা উচিত—সে বিষয়ে মতামত দেন, যা ট্রাম্পের কাছে ‘অনধিকার চর্চা’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ মহলে নেতানিয়াহুর ওপর বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়।
কোজিন বলেন,
“এরপর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করেন।”
ট্রাম্পের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: নেতানিয়াহুহীন মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতি?
ইসরায়েল হায়োম পত্রিকা বলছে,
“ট্রাম্প বর্তমানে নেতানিয়াহুর ভূমিকা ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী। বিশেষ করে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের দিকে তাঁর মনোযোগ বেশি।”
তারা আরও জানায়, ট্রাম্পের মতে নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে সাড়া দিতে দেরি করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্পের লক্ষ্য: ইসরায়েলের বাইরের অংশীদার
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প এখন ইসরায়েলকেন্দ্রিক নয় বরং সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ঘিরে নতুন একটি মধ্যপ্রাচ্য কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছেন, যাতে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও জ্বালানির বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে,
“নেতানিয়াহু যদি নিজের স্বার্থ সবার উপরে রাখেন, তবে তাকে পাশ কাটিয়ে চলাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কার্যকর কৌশল।”
ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপ?
নেতানিয়াহুর জন্য এই পরিস্থিতি অনেক বেশি বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। কারণ, মার্কিন রিপাবলিকানদের মধ্যে তাঁর দীর্ঘদিনের প্রভাব ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে।
যদি এই সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, তবে নেতানিয়াহুর বিদেশনীতি ও রাজনৈতিক অবস্থান গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ইসরায়েলের ডানপন্থী সংবাদমাধ্যমেও এবার নেতানিয়াহুর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যা তার রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে: কি প্রভাব পড়তে পারে?
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ড. সায়মন হ্যারিস বলছেন,
“ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর সম্পর্ক ছিল শুধু কূটনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবে একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করতেন। এই বিচ্ছিন্নতা যদি সত্যি হয়, তবে এটি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
তিনি আরও বলেন,
“বিশ্বের বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে ইসরায়েলের ভূমিকা কিছুটা কমিয়ে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।”
নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
যদিও এই প্রতিবেদন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয়, তবে বিভিন্ন সূত্রের বিবরণ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অগ্রাধিকার বিশ্লেষণ করলে ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবসম্মত বলেই মনে হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া মানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে এক নতুন মোড়, যেখানে সৌদি আরবের মতো দেশগুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।