বিশ্ব

মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান, ঘোষণা ট্রাম্পের

‍চরম উত্তেজনার মধ্যেই শান্তির বার্তা

দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহের সামরিক উত্তেজনার পর ভারত ও পাকিস্তান অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্যস্থতায় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ এই সমঝোতায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি

শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসে এমন সময়, যখন কাশ্মীর সীমান্তজুড়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল গোলাগুলি, বিমান হামলা ও প্রাণহানির ঘটনা।

‍ট্রাম্পের ঘোষণা: “দুই পক্ষই শান্তিতে ফিরতে রাজি”

হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,

“আমার প্রশাসনের দীর্ঘ ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দুই পক্ষই জানিয়েছে তারা আর সংঘাতে যেতে চায় না।”

তিনি আরও বলেন,

“কাশ্মীর সীমান্তে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় এড়াতে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের নেতারাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”

‍কি ঘটেছিল ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে?

গত এপ্রিলের শুরু থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলি ও মর্টার হামলার ঘটনা ঘটছিল। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারত পক্ষ তাদের সেনা চৌকি ও বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে।

এতে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় ২০ জনের বেশি সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও উদ্বেগ প্রকাশ করে।

‍ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা

দুই দেশের উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটন সক্রিয় হয়। সূত্র বলছে, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে কয়েকদফা উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চালায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন,

“ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করলেন যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির জন্য একটি দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে চান।”

‍কাশ্মীর ইস্যু থাকছেই সমাধানের বাইরে

যদিও এই যুদ্ধবিরতি তাৎক্ষণিক সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে কার্যকর হয়েছে, তবে কাশ্মীর ইস্যু এখনো দুই দেশের মূল বিরোধের কেন্দ্রে। ভারত কাশ্মীরকে তার “অভিন্ন অংশ” দাবি করে এবং পাকিস্তান এটিকে আন্তর্জাতিক বিরোধপূর্ণ অঞ্চল বলে আখ্যা দেয়।

অনেকেই বলছেন,

“যুদ্ধবিরতি একটি স্বস্তির খবর হলেও, কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।”

‍পাকিস্তান ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে,

“যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংঘাত প্রশমনের সিদ্ধান্তকে ইসলামাবাদ স্বাগত জানায়। আমরা সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাস করি।”

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,

“আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আগ্রহী, তবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবো না।”

‍আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,

“এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার পর এমন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা জাগায়।”

চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত–সবাই এই শান্তিচুক্তিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছে।

‍বিশ্লেষকদের মত: এটি কি টেকসই সমাধান?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সামিনা কাদরি বলেন,

“যুদ্ধবিরতি প্রশংসনীয় হলেও, এটিকে টেকসই করতে হলে কূটনৈতিক স্তরে ধারাবাহিক আলোচনা প্রয়োজন। অতীতে আমরা দেখেছি যুদ্ধবিরতি মানা হয়নি।”

তিনি যোগ করেন,

“কাশ্মীর, পানি ভাগাভাগি, সীমান্ত ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পরস্পরের অভিযোগ যদি দূর না হয়, তাহলে আবারও সংঘাত ফিরে আসতে পারে।”

শান্তির পথে ছোট্ট এক ধাপ?

ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, সারা বিশ্বের নিরাপত্তার প্রশ্ন। এই যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি দিলেও, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান ছাড়া এটি টেকসই হবে না বলে মনে করছেন অনেকেই।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সরাসরি ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক চাপ যে এই সমঝোতায় বড় ভূমিকা রেখেছে, তা অনেক বিশ্লেষকই একমত। এখন দেখার বিষয়, এই যুদ্ধবিরতির পর দুই দেশ কূটনৈতিক আলোচনায় কতদূর এগোয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button