বিশ্ব

পাকিস্তানের আক্রমণের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে, তাদের দাবি ভুয়া: ভারত

ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি ও বেসামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানের চালানো হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। শনিবার সকালে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন দাবিকে ‘ভুয়া ও ভিত্তিহীন’ বলেও উল্লেখ করেছে।

পাকিস্তানের হামলা ও ভারতের পাল্টা আঘাত

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুক্রবার রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে পাকিস্তান প্রথমে পশ্চিম সীমান্তের বিভিন্ন ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে হামলা চালায়। টার্গেটে ছিল উধমপুর, ভাটিন্ডা, ভূজ ও পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিসহ ২৬টি এলাকা। ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করে, অধিকাংশ হামলাকে সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে, যদিও আদমপুর, ভাটিন্ডা ও উধমপুরে কিছু সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পাল্টা জবাবে ভারত পাকিস্তানের অন্তত আটটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রফিকি, মুরিদ, চাকওয়ালা, নূর খান, সুক্কুর, চুনিয়া, পসরুর ও শিয়ালকোট। ভারত সরকারের দাবি, এসব অভিযানে পাকিস্তান ‘প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে’। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।

সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির দায় কার?

ভারতের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, পাকিস্তানের হামলায় বেসামরিক স্থাপনা, হাসপাতাল ও ধর্মীয় স্থানকেও লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, হামলায় রাজৌরি জেলার অতিরিক্ত জেলা কমিশনার রাজ কুমার থাপাসহ আরও দুজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় স্থান আক্রমণ করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ভারতীয় পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারত পাল্টা আক্রমণ চালানোর সময় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি এড়াতে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছে।

পাকিস্তানের দাবি ‘ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর’

সংবাদ সম্মেলনে বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান যে সব সামরিক বিজয়ের দাবি করছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে রাজস্থানের সুরতগড়, হরিয়ানার সিরসা, উত্তর প্রদেশের আজমগড় এবং আদমপুরের এস-৪০০ ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করা হয়েছে, যা ‘পুরোপুরি মিথ্যা’।

এমনকি পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারত নাকি আফগানিস্তানেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে—এই প্রচারকেও ‘উদ্ভট ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়।

ভুয়া প্রচার প্রতিহত করতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয় আদমপুর, সুরতগড়, সিরসা এবং আজমগড়ের সামরিক ঘাঁটির উপগ্রহচিত্র ও রানওয়ের সাম্প্রতিক (১০ মে সকালের) ছবি, যাতে দেখা যায় এসব স্থাপনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন নেই।

ভারতীয় হামলার ভিডিও প্রকাশ

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিমান ও সেনাঘাঁটিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে স্পষ্টভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে দেখা যায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাগুলোকে।

উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিটি টার্গেট চিহ্নিত করে অপারেশন পরিচালনা করেছি। আঘাতে শত্রু সামরিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় এবং প্রচারযুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বাড়ছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ইতিমধ্যে বলেছেন, “ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব আমাদের বিষয় নয়, তবে উভয় দেশকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” একইসঙ্গে জাতিসংঘ, চীন, ইরান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button