অপারেশন সিন্দুর’ হামলায় পাকিস্তানে শিশুসহ ২৬ জন নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দাবি, এই অভিযানে একাধিক শিশুসহ অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। বুধবার (৭ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তবর্তী অন্তত ৯টি ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। এদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে তারা ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
অভিযান ‘সিন্দুর’: কী ঘটেছে?
বুধবার সকালে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। ভারতের সামরিক বাহিনীর দাবি, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংস করা। অভিযানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। কাশ্মির উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের ওপর হামলার দায়ে যারা জড়িত, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই এই অভিযান।”
পাল্টা প্রতিক্রিয়া: ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় দাবি করেছে, তারা ভারতের মোট ৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, “ভূপাতিত হওয়া ভারতীয় বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে— তিনটি রাফাল, একটি এসইউ-৩০, একটি মিগ-২৯ এবং একটি হেরন ড্রোন।”
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ভূপাতিত হওয়া বিমানের মধ্যে তিনটি ভারতের জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিমান চলাচলে স্থবিরতা: দুই দেশেই ফ্লাইট স্থগিত
উভয় দেশের সামরিক উত্তেজনার কারণে বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ভারতের প্রধান এয়ারলাইন্স কোম্পানি ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া ও অন্যান্য সংস্থাগুলো সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সকল ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CAA) জরুরি ভিত্তিতে পুরো দেশের আকাশসীমা ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচি, ফয়সালাবাদ, সিয়ালকোট ও কোয়েটা বিমানবন্দরগুলোতে অপারেশন বন্ধ রয়েছে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় বলেন, “বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে।” তিনি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন জানান।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন কূটনৈতিক শক্তি। বিশেষ করে ইরান ও রাশিয়া— দুই দেশই আগে থেকেই শান্তিপূর্ণ সমাধানে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে।
পটভূমি: কীভাবে শুরু হলো এই উত্তেজনা?
এই সামরিক অভিযানের পেছনে মূল প্রেক্ষাপট তৈরি হয় ২২ এপ্রিলের ভয়াবহ এক হামলার মধ্য দিয়ে। কাশ্মিরের পেহেলগামে সেদিন পর্যটক বহনকারী একটি কনভয়ে হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ভারতীয় ও বিদেশি পর্যটক। ভারতের দাবি, এই হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত।
এই হামলার পর ভারত ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তোলে এবং বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেয়। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং একে ‘অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করে।
বিশ্লেষণ: যুদ্ধ নাকি আত্মরক্ষা?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’ ভারতের তরফ থেকে এক ধরনের বার্তা— যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব কূটনীতির বাইরেও আসতে পারে। তবে পাল্টা হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের সমালোচনার মুখেও ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি যদি সত্যি হয়, তবে ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের এমন মুখোমুখি অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। যদিও যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানই হতে পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়।