বিশ্ব

গাজা দখলে রাখার ঘোষণা নেতানিয়াহুর, হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত

গাজা উপত্যকায় পূর্ণ সেনা নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, হামাস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই আসে না। এই ঘোষণার মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় দীর্ঘমেয়াদী সামরিক উপস্থিতির একটি নীতিগত অবস্থান নিশ্চিত করল।

সোমবার (৫ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা শুধু ভেতরে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসব না। আমাদের উদ্দেশ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজা থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামিরের সুপারিশ অনুযায়ী, যুদ্ধের পরবর্তী ধাপে আমরা হামলা জোরদার করছি।”

মন্ত্রিসভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পর কৌশলগত ঘোষণা

নেতানিয়াহু জানান, আগের দিন রাতে মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ বৈঠকে ‘হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জোরদারের’ সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই তিনি এই ভিডিও বার্তাটি প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হলো—জিম্মিদের উদ্ধারে অগ্রগতি এবং হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করা। এই দুটি উদ্দেশ্য পরস্পর-সম্পর্কিত। তাই আমরা কাউকে ছাড় দেব না, পিছুটানও থাকবে না।”

শুরু হয়েছে ‘গিদিয়ন’স চ্যারিয়টস’ অপারেশন

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ-এর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন জানান, গাজায় ‘নতুন ও তীব্রতর যুদ্ধপর্ব’ শুরু হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন গিদিয়ন’স চ্যারিয়টস

এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো:

  • ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা
  • হামাস শাসনের পূর্ণ পতন
  • গাজার ভূখণ্ডে নিরাপত্তা জোরদার করে ‘বাফার জোন’ তৈরি করা

ডেফ্রিন জানান, “আমরা গাজার প্রতিটি অঞ্চলে ‘রাফা মডেল’ বাস্তবায়ন করব। হামাসের অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়ে গাজাকে ইসরায়েলের সুরক্ষিত সীমান্ত অঞ্চলে পরিণত করব।”

ফিলিস্তিনি জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

টাইমস অব ইসরায়েলসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের মতে, ইসরায়েল একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যার অধীনে উত্তর গাজা থেকে ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণকে সরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে গাজার জনগণ ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে ‘কৌশলগত বিচ্ছিন্নতা’ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে, যাতে আইডিএফ আরও কার্যকরভাবে সামরিক অভিযান চালাতে পারে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্যে দীর্ঘমেয়াদী দখলের ইঙ্গিত

নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা শুধু এলাকা দখল করে আবার সরে যাব না। আমাদের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা গাজায় অবস্থান করব, যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস হয়।”

তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, গাজায় দীর্ঘমেয়াদী সামরিক উপস্থিতি এবং সম্ভবত স্থায়ী নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে ইসরায়েল।

যুদ্ধের মানবিক প্রভাব আরও গভীর হবে?

নতুন এই সামরিক কৌশল ও দখলের ঘোষণার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, গাজায় মানবিক সংকট আরও গভীর হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা থেকে ব্যাপক জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়াসের ফলে আরও একটি ‘গণচ্যুতি’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button