বিশ্ব

গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলেছে ইসরায়েল, এর মধ্যেই হামলায় নিহত ৫০

Advertisement

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংকটের মাঝে ইসরায়েল এক নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। গত শনিবার থেকে তারা আকাশ থেকে ত্রাণ সামগ্রী ছোঁড়ার মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। তবে একই সময়ে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে অনেকে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নিহত হয়েছেন।

গাজার মানবিক পরিস্থিতি: ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও স্বাস্থ্য সংকট

গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দিন দিন বাড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা অবরোধ এবং সামরিক সংঘর্ষের কারণে এই এলাকার বেসামরিক নাগরিকরা এক গভীর মানবিক দুর্ভোগে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেছে, গাজার শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা বিপজ্জনক হারে বেড়ে চলেছে।

ইসরায়েলের আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা: উদ্যোগ এবং সীমাবদ্ধতা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, তারা গাজার নির্দিষ্ট অঞ্চলে এক দফা ত্রাণসামগ্রী আকাশ থেকে ফেলার মাধ্যমে বিতরণ করেছে। এছাড়া তারা মানবিক করিডর খোলার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়ি গুলো নিরাপদে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে।

তবে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ সংকট মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। স্থলপথে আরও বেশি পরিমাণ ত্রাণ পাঠানো ও মানবিক করিডরের বিস্তারের দাবি তুলেছেন তারা। গাজার ওপর গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, যদিও মে মাসের শেষ দিকে সীমিত পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহযোগিতা

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ঘোষণা দিয়েছে তারা গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ পাঠানোর কাজ পুনরায় শুরু করবে। যুক্তরাজ্যও জর্ডানসহ অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই সমস্ত উদ্যোগের মাঝেও সামরিক সংঘর্ষ থামেনি, এবং বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু থামানো যায়নি।

ইসরায়েলি হামলার তাণ্ডব ও ফিলিস্তিনি হতাহতের সংখ্যা

ফিলিস্তিনি বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষমান বা আশপাশে অবস্থানকারী সাধারণ মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৯,৭৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর বাধা ও অপহরণ

আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) একটি ত্রাণ জাহাজকে ইসরায়েলি বাহিনী বাধা দিয়েছে এবং জাহাজটির আরোহীদের অপহরণ করেছে। এফএফসি জানিয়েছে, জাহাজটি গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করছিল। ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজের ক্যামেরা বন্ধ করে দেয় এবং বর্তমানে ওই জাহাজের সাথে কোনও যোগাযোগ নেই।

গাজার দীর্ঘমেয়াদি সংকটের পটভূমি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলী সীমান্তে হামলার পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমেই সঙ্কটময় হয়ে উঠেছে। ওই হামলায় ইসরায়েলে ১,২১৯ জন নিহত হয়েছিল। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরোপ করে এবং দীর্ঘদিন অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে গাজার মানুষদের জীবনযাত্রা প্রতিনিয়ত বিপন্ন হচ্ছে।

গাজার মানুষের মানবিক সংকট কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জরুরি। ত্রাণ সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা, ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করাই একমাত্র উপায় যাতে গাজার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button