মস্কোর আকাশে আবারও ড্রোন হামলা, বন্ধ করে দেওয়া হলো সব বিমানবন্দর

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দিকে একঝাঁক ইউক্রেনীয় ড্রোন উড়ে আসার পর রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলো ভূপাতিত করার দাবি করেছে। টানা দ্বিতীয় রাতের মতো এই ধরনের ড্রোন হামলার ঘটনায় পুরো মস্কোজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার জেরে সতর্কতা হিসেবে রাজধানীর চারটি প্রধান বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন এক টেলিগ্রাম পোস্টে জানান, ভোররাতে রাজধানীর দিকে আসা কমপক্ষে ১৯টি ড্রোন রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব ড্রোন মূলত ইউক্রেন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে রাশিয়া।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের কাছে ড্রোনের আঘাতে কাচ ভেঙে যায় বলে জানানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মেয়র সোবিয়ানিন আরও বলেন, “আমাদের শহরে ড্রোন ধ্বংসাবশেষ পড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলগুলোতে জরুরি সেবা বিভাগের সদস্যরা কাজ করছেন।”
বিমান চলাচল বন্ধ, আঞ্চলিক শহরেও সতর্কতা
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ রোসাভিয়াতসিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সতর্কতা হিসেবে মস্কোর চারটি প্রধান বিমানবন্দর—শেরেমেতিয়েভো, ভনুকোভো, দোমোডেদোভো ও ঝুকভস্কি—এর সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া কিছু আঞ্চলিক শহরের বিমানবন্দরেও বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তুলা, বেলগোরোদ ও ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের বিমানঘাঁটিগুলো।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে ড্রোন হামলার বিস্তৃত বিবরণ
রুশ নিরাপত্তা সংস্থার ঘনিষ্ঠ তিনটি জনপ্রিয় টেলিগ্রাম চ্যানেল—বাজা, ম্যাশ ও শট—প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, মস্কোর দক্ষিণাংশের একটি আবাসিক ভবনের কাছাকাছি ড্রোন বিস্ফোরিত হয়। এতে ভবনের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাশিয়ার সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, হামলাটি আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে চালানো হয়নি।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না এলেও হামলার পেছনে যুক্তি স্পষ্ট
এ পর্যন্ত ইউক্রেন সরকার এই ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পূর্ববর্তী ঘটনার মতো এবারও ধারণা করা হচ্ছে, এই ড্রোন হামলা ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ বাহিনীর পক্ষ থেকেই পরিচালিত হয়েছে।
ইউক্রেন আগে থেকেই বলে আসছে, তারা রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত অবকাঠামো ও সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে। ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড, বিশেষ করে আবাসিক এলাকা ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় রাশিয়ার অব্যাহত হামলার প্রতিক্রিয়াতেই এই পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করে কিয়েভ।
পূর্ববর্তী হামলা: চলতি বছর সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা হয়েছিল মার্চে
প্রসঙ্গত, চলতি বছর মার্চ মাসে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় মস্কোয় তিনজন নিহত হন, যা ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা। এরপর এপ্রিল মাসেও একাধিকবার রাজধানী অঞ্চলে ড্রোন আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেনের এই ড্রোন হামলা কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মস্কোর মতো নিরাপদ এবং কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত শহরে হামলা চালাতে সক্ষম হওয়া মানে হচ্ছে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা। একই সঙ্গে এটি রুশ জনগণের মধ্যে চাপ এবং হতাশা তৈরি করছে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো এই ড্রোন হামলার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দেয়নি। তবে সরকারি গণমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হয়েছে যে, রাশিয়া ইউক্রেনের এই ধারাবাহিক হামলার জবাবে আরও কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এসব হামলা মস্কোকে আরও বেশি করে ইউক্রেনের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলা চালানোর প্ররোচনা দিতে পারে। এর ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে এবং বেসামরিক প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়তে পারে।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন
এই হামলার ঠিক আগের দিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতিতে যেতে তাঁরা প্রস্তুত। তবে বাস্তবে ড্রোন হামলা ও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যেভাবে চলছে, তাতে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরের বিষয় বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিশ্ব প্রতিক্রিয়া: ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নজর
মস্কোয় ড্রোন হামলা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের নজর কেড়েছে। তারা এই হামলাগুলোকে ইউক্রেনের আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই ধরনের হামলা যুদ্ধটিকে আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে।