শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের ‘কলিজা খুলে ফেলার’ হুমকি, অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল

গত কয়েকদিনে কুমিল্লা থেকে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুল আলমকে ‘কলিজা খুলে ফেলার’ হুমকি দেওয়া হয়েছে। অডিওর প্রধান হুমকিদাতা হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির নেতা আবদুল গফুর ভূঁইয়া। এই অডিওতে গালাগাল, হুমকি-ধামকি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে, যা স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ঘটনা ও অডিওর বিশদ বিবরণ
মে মাসে রেকর্ড হওয়া এই অডিওটি ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের, যেখানে সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অকথ্য ভাষায় হুমকি দেন। ফোনালাপে তিনি বলেন, “আপনার কত বড় কলিজা? আমি আপনার কলিজাও খুলে ফেলব। আমি অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব।” এছাড়া, তিনি বলেন, “আমি আইন জানি, আমি টোকাই না।” অডিওর পুরো অংশেই গালিগালাজ এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকির কথা শোনা যায়।
এই অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল, যা এই ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে।
প্রেক্ষাপট
গত ১৭ মে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক একটি চিঠি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাঠান, যেখানে নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতির পদে তিনজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া, বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন এবং আরও একজন। পরে বোর্ড থেকে ড. মীর আবু সালেহকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া ফোনে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে হুমকি দেন। পরবর্তীতে ড. মীর আবু সালেহ পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং বোর্ড থেকে পুনরায় গফুর ভূঁইয়াকে সভাপতি করা হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগত বিরোধ ও শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
অডিও ভাইরাল হওয়ার পর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, “চেয়ারম্যান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।” বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি তারা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া বলেন, “অডিওটি মিথ্যা অপপ্রচারের অংশ এবং এটি সম্পাদিত,” তিনি আরও বলেন, “এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলব না।”
বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার অভিযোগ করেন, গফুর ভূঁইয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের লোকজনকে হেনস্তা ও হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, “তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য এ ধরনের কাজ করেন।”
স্থানীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দের মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আশা করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবাই যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব ঢুকছে—এটি নতুন নয়। তবে এই ধরনের হুমকি ও গালাগাল সামাজিক ও শিক্ষাগত পরিবেশের জন্য উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরিচালিত করা যায়।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “নাঙ্গলকোটের এই ঘটনা শুধু একটি ছোটখাটো প্রশাসনিক বিবাদ নয়, এটি এলাকার রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিফলন।”
ভবিষ্যৎ করণীয় ও প্রত্যাশা
এ ঘটনার পর শিক্ষাবোর্ড এবং প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সবাই নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরও আশা, এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনকে কঠোর মনোভাব নিয়ে হুমকি-ধামকি প্রতিরোধ করতে হবে, যাতে শিক্ষাব্যবস্থা অচল না হয় এবং শিক্ষার পরিবেশে কলুষতা না আসে।
সংক্ষিপ্তসার
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিরোধ এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে, যেখানে সাবেক এমপির ‘কলিজা খুলে ফেলার’ হুমকি নিয়ে একটি অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সকলে অনুভব করছেন।
এম আর এম – ০৮৩২, Signalbd.com