পুতিন হয়তো যুদ্ধ থামাতে চান না : ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার তীব্র সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন, ‘হয়তো পুতিন যুদ্ধ থামাতে চান না।’ তিনি বলেন, বেসামরিক এলাকার ওপর এই হামলা পুতিনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, রোম সফরের সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতের পরে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, মস্কোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজন হতে পারে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নতুনভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও বলেন, “গত কয়েক দিনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাইনি। বেসামরিক এলাকায় শহর ও নগরীর ওপর এভাবে হামলা চালানোর মানে হতে পারে পুতিন যুদ্ধ থামাতে ইচ্ছুক নন। এটা খুবই দুঃখজনক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “পুতিন হয়তো সময় নষ্ট করছেন এবং কৌশলগতভাবে পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত করছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, তাকে ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা বা সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ভিন্নভাবে চাপে ফেলা উচিত কি না। কারণ, খুব বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে!”
রোমে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক
এই সমালোচনার মধ্যেই রোমের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভোলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হোয়াইট হাউস এই বৈঠককে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছে। বৈঠকটি প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়, যেখানে উভয় নেতা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
জেলেনস্কি পরে সাংবাদিকদের জানান, এই বৈঠক অত্যন্ত প্রতীকী এবং ভবিষ্যতে তা ঐতিহাসিক হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা শান্তির জন্য আমাদের প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছি। এই যুদ্ধ থামাতে বিশ্বের নেতাদের একযোগে কাজ করা উচিত।”
দুটি ছবি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায়, ট্রাম্প নীল স্যুটে এবং জেলেনস্কি কালো শার্ট ও প্যান্ট পরে একে অপরের মুখোমুখি বসে গম্ভীর আলোচনায় মগ্ন। উভয়ের মুখে যুদ্ধের বাস্তবতা এবং এর ভয়াবহতার প্রতিফলন স্পষ্ট ছিল।
ক্রেমলিনের বার্তা
এদিকে, ক্রেমলিন শনিবার জানিয়েছে, শুক্রবার মস্কোতে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ‘কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই’ ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, “রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় তবে পশ্চিমা দেশের পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান এবং ইউক্রেনের অনমনীয় মনোভাব সমস্যা তৈরি করছে।” রুশ কর্মকর্তারা আরও অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের সামরিক মিত্ররা অব্যাহতভাবে অস্ত্র সরবরাহ করে যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে।
ট্রাম্পের অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর নীতিগত অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বৈঠকের সময় তিনি বলেছিলেন, “জেলেনস্কি জিতছেন না এবং ইউক্রেনের হাতে তেমন কোনো শক্তিশালী কার্ড নেই।” এবারও তিনি একই বার্তা পুনরায় উল্লেখ করে বলেছেন, “এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে এবং বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, ইউক্রেনে অতিরিক্ত আর্থিক ও সামরিক সহায়তার পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবো, কিন্তু অস্ত্রের মাধ্যমে সংঘাত বাড়ানো সমাধান হতে পারে না।”
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, তাঁর দেশ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করবে না। তিনি বলেন, “আমরা ন্যায্য শান্তি চাই। রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ না হলে ইউক্রেনের জনগণ কখনো মাথা নত করবে না।”
তিনি আরও জানান, ইউক্রেন তার মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি সমর্থন প্রত্যাশা করছে। জেলেনস্কি বলেন, “যারা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে চায়, তাদের আমাদের পাশে থাকতে হবে।”
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ভবিষ্যতের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যদি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা কমান, তবে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান বজায় রাখার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তারা বলছেন, রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় টেনে আনার জন্য আর্থিক ও কূটনৈতিক চাপ জারি রাখতে হবে।