বিশ্ব

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: আহত ৪ শতাধিক, প্রাণহানির আশঙ্কা

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী বন্দর আব্বাস-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শহীদ রাজী বন্দরের এই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০৬ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কী ঘটেছিল?

শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, স্থানীয় সময় দুপুরে ইরানের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক বন্দর শহীদ রাজী-তে হঠাৎ এক বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে কয়েক মাইল দূর থেকেও ধোঁয়ার কুণ্ডলি দৃশ্যমান ছিল। বিস্ফোরণের পরপরই বন্দরের কন্টেইনার ডিপোতে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট জানিয়েছেন, আহত ৪০৬ জনকে দ্রুত হরমুজগান প্রদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম দ্রুত গতিতে চলছে বলে জানান তিনি।

বিস্ফোরণের কারণ এখনও অজানা

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কন্টেইনার ডিপোতে সংরক্ষিত রাসায়নিক পদার্থের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। বিস্ফোরণের পর পুরো বন্দর এলাকা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং পুরো এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিভিন্ন দেশ এই কন্টেইনার ডিপো ব্যবহার করে আসছিল, তাই আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিস্ফোরণের সময় বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চলছিল, ফলে হতাহতের সংখ্যা বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরমাণু আলোচনা চলাকালীন রহস্যজনক বিস্ফোরণ

ঘটনাটি এমন সময় ঘটলো যখন ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে তৃতীয় দফার পরমাণু চুক্তি আলোচনা চলছিল। এই পটভূমিতে বিস্ফোরণটিকে নিছক দুর্ঘটনা না ভেবে অনেকে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র বা আক্রমণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। যদিও এখন পর্যন্ত ইরান সরকার বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে নাশকতা বলে ঘোষণা করেনি।

উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম

বিস্ফোরণের পর দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট টিম, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বন্দর সংলগ্ন সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও জরুরি সেবা বিভাগ সকল নাগরিককে বন্দর এলাকার আশপাশ এড়িয়ে চলার অনুরোধ করেছে। আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সশস্ত্র বাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এখনও আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে বিস্ফোরণের আকস্মিকতা এবং ইরানের কৌশলগত এই বন্দরের গুরুত্বের কারণে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, তখন এমন একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতের আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শহীদ রাজী বন্দর: ইরানের অর্থনৈতিক লাইফলাইন

শহীদ রাজী বন্দর ইরানের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর। এ বন্দর দিয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আধুনিক বন্দরের তালিকায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বন্দরটির মাধ্যমে ইরান চীন, ভারত, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক সংযোগ বজায় রাখে।

এই বন্দর যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অকেজো হয়ে যায়, তাহলে ইরানের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিককালে ইরানে বিস্ফোরণের ধারা

উল্লেখযোগ্য যে, গত কয়েক বছরে ইরানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনা ও শিল্প এলাকা লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ও নাশকতার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার জন্য ইরান বারবার বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দিকে আঙুল তুলেছে, যদিও প্রমাণ পাওয়া কঠিন হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

ইরানি কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি তারা বন্দর এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনাও বিবেচনা করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, শহীদ রাজী বন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় এ ধরনের বিস্ফোরণ শুধু ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

বন্দর আব্বাসের শহীদ রাজী বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ শুধু ইরানের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যই এক অশনি সংকেত। এখন মূল প্রশ্ন হলো—এই বিস্ফোরণ নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? তদন্তের ফলাফলের দিকেই এখন তাকিয়ে আছে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

আহতদের দ্রুত সুস্থতা এবং পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা কামনা করছে বিশ্ববাসী।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button