বিশ্ব

যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ফের সহিংস হামলা, নিহত ২ হাজার ফিলিস্তিনি

গাজা উপত্যকায় ফের রক্তক্ষয়ী সহিংসতা শুরু করেছে ইসরায়েল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির পর ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫ হাজার ২০০ জনের বেশি

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভোর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয় চিকিৎসা সূত্র। গাজার উত্তরের জাবালিয়া এলাকায় একক হামলায় একই পরিবারের ১২ সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে ভয়াবহ হামলার শুরু

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল গাজায়। কিন্তু সেই শান্তিচুক্তি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে ফের আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল এখন আরও শক্তিশালী বোমা ও বিস্ফোরক ব্যবহার করছে, যার ফলে হতাহতের হার আগের তুলনায় চারগুণ বেড়েছে

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল এখন সজ্ঞানে ও পরিকল্পিতভাবে সর্বোচ্চ ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করছে, যাতে করে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি নিশ্চিত করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ: গণহত্যার আশঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক একাধিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলের হামলায় সাধারণ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুহার বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এটি একটি গণহত্যার ইঙ্গিত বহন করছে, যেখানে লক্ষ্যবস্তু কেবল হামাস নয় বরং গাজার সাধারণ মানুষও।

জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সামরিক কৌশলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজার উত্তরাঞ্চল

গাজার উত্তরাংশ বর্তমানে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ওই অঞ্চলে ইসরায়েলের ট্যাংক ও ভারী গোলাবর্ষণ লক্ষ্য করা গেছে। স্কুল, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন সব কিছুই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

মোট হতাহতের পরিসংখ্যান (১৮ মার্চ – ২৫ এপ্রিল ২০২৫)

বিষয়সংখ্যা
মোট নিহত ফিলিস্তিনিপ্রায় ২,০০০
আহত ফিলিস্তিনি৫,২০০+
গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত৬০+
জাবালিয়ায় এক পরিবারে নিহত১২ জন
সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুহারযুদ্ধবিরতির আগের তুলনায় ৪ গুণ বেশি

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যত আশঙ্কা

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে, তবে তার মেয়াদ, বাস্তবায়ন কাঠামো ও ইসরায়েল-হামাস উভয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ২৩ এপ্রিলের প্রস্তাবে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আলোচনায় এসেছে, তবে ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা কতটা মেনে নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আন্তর্জাতিক চাপ না বাড়ে এবং মানবিক সহায়তা অব্যাহত না থাকে, তাহলে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button