বিশ্ব

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এমন এক সময়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন যা গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক বার্তা বহন করে।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ দিকে গড়াতে পারে, আর এই সম্ভাবনা গোটা বিশ্বকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

“যদি কোনো সর্বাত্মক আক্রমণ হয়, তার জবাবে আমাদেরও প্রস্তুতি রয়েছে”

সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোলামেলা বলেন,

“ভারত যদি কোনো কিছু শুরু করে, আমরা প্রতিক্রিয়া জানাবো। যদি তা সর্বাত্মক হামলায় পরিণত হয়, তাহলে এর ফলও হবে একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ।”

তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত, এবং সামরিক দিক থেকে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা যথেষ্ট বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

তবে শান্তিপূর্ণ সমাধানেই এখনও ভরসা রাখছেন আসিফ

যদিও বক্তব্যে ছিল কড়া সতর্কবার্তা, তবে খাজা আসিফ এও বলেছেন,

“আমি আশা করি, এই পরিস্থিতির এখনও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানই সকলের জন্য শ্রেয়।”

এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আভাস দেন যে কূটনৈতিক পথ এখনও বন্ধ হয়নি, যদিও সামরিক প্রস্তুতি পুরোপুরি চালু রয়েছে।

কাশ্মির ইস্যু ও দুই দেশের বর্তমান সম্পর্ক

গত কয়েক দশক ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্তই থেকেছে, যার কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মির। ২০১৯ সালে ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং রাজ্য বিভাজনের পর থেকেই এই উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ের সন্ত্রাসী হামলায় ভারত পাকিস্তানের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে, যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। এর জেরে আবারও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েছে, যার ফলস্বরূপ সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও আকাশপথে নজরদারি জোরদার হয়েছে।

বিশ্বের উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক হুমকি নিয়ে

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায়, যেকোনো সংঘাত আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ, ২০০১ সালের সংসদ হামলা পরবর্তী উত্তেজনা এবং ২০১9 সালের বালাকোট হামলার মতো উদাহরণগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়—এই দুই দেশের মধ্যে ছোটখাটো উত্তেজনাও বড় পরিণতির দিকে গড়াতে পারে।

আলোচনার দরজা খোলা থাকলেও সতর্ক সময় পার করছে উপমহাদেশ

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য গোটা দক্ষিণ এশিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট বার্তা—দুই দেশের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা আর শুধু কথার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নেই। যদিও আলোচনার সম্ভাবনা এখনও টিকে আছে, তবে উভয় পক্ষের সামরিক তৎপরতা এবং হুঁশিয়ারি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের তৎপরতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button