ভূমিকম্পের পর ৫১ বার পরাঘাতে কেঁপে উঠল ইস্তাম্বুল

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ২ মাত্রার এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরপরই আরও ৫১ বার পরাঘাতে কেঁপে ওঠে অঞ্চলটি। ভূমিকম্পে প্রাণহানি না ঘটলেও অন্তত ১৫১ জন মানুষ আহত হয়েছেন, যাঁদের অনেকেই আতঙ্কে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
মর্মর সাগরে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্র
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানান, স্থানীয় সময় গতকাল (বুধবার) দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণে অবস্থিত মর্মর সাগরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ঘটে। কম্পনটির গভীরতা ছিল ৭ কিলোমিটার এবং স্থায়ী ছিল প্রায় ১৩ সেকেন্ড। এটি ছিল এতটাই শক্তিশালী যে রাজধানী আংকারাসহ আশপাশের বহু শহরেও কম্পন অনুভূত হয়।
৫১ বার পরাঘাত, একটি ছিল ৫.৯ মাত্রার
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়, মূল ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ১২ মিনিট পর্যন্ত ৫১টি আফটারশক বা পরাঘাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৯। এই পরাঘাতগুলোর কারণে শহরের বেশ কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
আতঙ্কে আহত ১৫১ জন
ইস্তাম্বুলের মেয়র দাভুত গুল জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে শহরে বড় কোনো অবকাঠামো ধসে পড়েনি। তবে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন ভবন থেকে দ্রুত নামার চেষ্টা করে আহত হন। অনেকে উচ্চ ভবন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যান। এখন পর্যন্ত ১৫১ জনকে আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল এবং পূর্বের স্মৃতি
তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটির উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইনের কারণে প্রায়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রায় ৫৩ হাজার এবং সিরিয়ায় ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো দেশবাসীর মনে জেগে আছে। ফলে ইস্তাম্বুলের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
সতর্কতা ও প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইস্তাম্বুলের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরে ভূমিকম্প মোকাবেলার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। জরুরি উদ্ধার ব্যবস্থাপনা, ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণ ও জনসচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তুরস্ক সরকার কী বলছে?
তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইস্তাম্বুলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগে যাতে কোনো ঝুঁকি না থাকে, সে জন্য তাৎক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস কি?
বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, এই ভূমিকম্প হয়তো আরও বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত চাপ হঠাৎ করেই বড় ধরনের ভূমিকম্পের রূপ নিতে পারে। তাই এখনই ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়াতে কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
তুরস্কের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেও উচিত হবে এই ঘটনার শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দুর্যোগ প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা। কারণ, বাংলাদেশসহ অনেক দেশ একইরকম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত।