বিশ্ব

নিহতরা সাধারণ পর্যটক নয়, ভারতীয় বাহিনীর হয়ে অনুসন্ধানে এসেছিল

ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই মর্মান্তিক হামলার পর পরই অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং গোটা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নেওয়া কাশ্মিরভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘দ্য রেসিসটেন্স ফোর্স’ (টিআরএফ) দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তিরা শুধুমাত্র পর্যটক ছিলেন না, বরং তারা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ছদ্মবেশে অনুসন্ধান চালাতে এসেছিলেন।

এই ঘটনায় কেবল ভারত নয়, গোটা উপমহাদেশেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পেহেলগামের মতো একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে এত বড় হামলা, তাও পর্যটকদের টার্গেট করে—এটি গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

হামলার বিবরণ

স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে পেহেলগামের একটি জনপ্রিয় ট্রেকিং রুটের কাছে একদল বন্দুকধারী অতর্কিতে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা অত্যন্ত সংগঠিত এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হামলার সময় গুলি এবং বিস্ফোরণ দুটোই ব্যবহৃত হয়েছিল। এতে ঘটনাস্থলেই ২০ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়।

পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর তৎপরতায় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। অভিযান এখনও চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজন তিন বন্দুকধারীর স্কেচ প্রকাশ করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা।

টিআরএফের দাবি: পর্যটক নয়, তারা ছিল ‘গোপন অনুসন্ধানকারী’

হামলার পরদিন, বুধবার (২৩ এপ্রিল) টিআরএফ এক বিবৃতি প্রকাশ করে হামলার দায় স্বীকার করে। বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করে, “যাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে, তারা সাধারণ কোনো পর্যটক ছিলেন না। তাদের ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল এবং তারা গোপন সংস্থার সদস্য। পর্যটকের ছদ্মবেশে তারা কাশ্মিরে গোপন অনুসন্ধানে এসেছিল।”

টিআরএফ আরও জানায়, এ হামলা কেবল নয়াদিল্লির প্রতি একটি বার্তা নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্যেও একটি হুঁশিয়ারি, যারা “ভারত সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ নীতির” সমর্থন করে থাকেন। গোষ্ঠীটি ভবিষ্যতে আরও “লক্ষ্যভিত্তিক অপারেশন” চালানোর হুমকিও দিয়েছে।

ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া

ভারত সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরএফের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কড়া ভাষায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পেহেলগামে কাপুরুষোচিত এই হামলায় আমরা অনেক নিরীহ নাগরিককে হারিয়েছি। আমি তাঁদের পরিবারদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এ হামলার পেছনে যারা রয়েছে, তারা শিগগিরই কঠোর জবাব পাবে।”

তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। ভারতের ভূখণ্ডে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ সহ্য করা হবে না। যারা সরাসরি জড়িত, শুধু তারাই নয়, যারা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে এবং ভারতকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।

অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট

এই হামলার পর কাশ্মির অঞ্চলে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে হিমালয়ান রিজিয়ন এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। টিআরএফের দাবি সত্য হলে বিষয়টি কেবল সন্ত্রাসী হামলা নয়, বরং এক ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি বা পাল্টা গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের অংশ হয়ে দাঁড়ায়—যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

কাশ্মিরি রাজনীতিবিদ এবং নাগরিক সমাজের নেতারাও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকেই এই ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকে দায়ী করছেন। কাশ্মিরে বারবার সামরিকীকরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এই অঞ্চলে এমন সশস্ত্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে বলেও তারা দাবি করেছেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button