কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দায় মোদিকে বার্তা দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গভীর সমবেদনা জানিয়ে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অটল অবস্থানের পুনরুল্লেখ করেন।
ড. ইউনূসের বার্তা: শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা
বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন,
“কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা এই জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আবারও নিশ্চিত করছি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় দৃঢ়।”
এই বার্তায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের শান্তি ও মানবিকতা ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা, যেখানে সহিংসতা নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কাশ্মীর হামলার পটভূমি: ভয়াবহ এক বিকেল
গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে ঘটে এ হামলা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা বন্দুকধারীরা আচমকা পর্যটকদের একটি দলকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ মানুষ পালানোর চেষ্টা করলেও মুহূর্তের মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
যদিও সরকারিভাবে নিহতদের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে—নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র অনুযায়ী, কমপক্ষে ২৬ জন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া: মোদির নিন্দা ও প্রতিশ্রুতি
হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে “জঘন্য কাজ” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
“কাশ্মীরের পেহেলগামে এই কাপুরুষোচিত হামলা নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, কেন্দ্র সরকার কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক পরিবেশ
কাশ্মীর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘসহ একাধিক দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ—বাংলাদেশ ও ভারত—সম্পর্কিত বিষয় হওয়ায় কূটনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনার প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার পর ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আরও বৃদ্ধি পাবে, বিশেষত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে।
ড. ইউনূসের অবস্থান: আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ
ড. ইউনূস শুধুমাত্র একজন অর্থনীতিবিদ বা শান্তিতে নোবেলজয়ীই নন, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অন্যতম মুখপাত্রও। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টায় সক্রিয় হয়েছেন।
এই হামলার পর তার শক্ত বার্তা ভারতীয় সরকার ও জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সহমর্মিতার প্রকাশ তো বটেই, একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগের প্রতি গুরুত্বারোপও করে।
বিশ্লেষণ: আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় কী প্রভাব ফেলবে?
কাশ্মীর অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে ঘন ঘন সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় শুধু দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এই হামলার প্রেক্ষিতে ভারত যদি প্রতিক্রিয়ায় কঠোর সামরিক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বেড়ে যেতে পারে। আবার, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।
শেষ কথা: শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা গোটা অঞ্চলের জন্যই একটি হুমকি। এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে মোদিকে পাঠানো বার্তা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়াই নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি, সম্প্রীতি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ।
যেখানে সন্ত্রাস দুঃখ বয়ে আনে, সেখানেই শান্তি ও সহমর্মিতা হতে পারে সবচেয়ে বড় জবাব।