আঞ্চলিক

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভারতে গ্রেপ্তার

জুলাই গণহত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান আরিফকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের ৩টি হত্যা ও ২টি হত্যা চেষ্টা মামলার অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেপ্তারের বিস্তারিত

ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার হাকিমপুর চেকপোস্টে শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় তিনি আটক হন। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটককালে তার পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হয় এবং নিশ্চিত হয় যে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারের পরে তাকে ভারতের স্বরূপনগর থানায় রাখা হয়েছে।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আরিফুজ্জামান শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামিদের একজন। ওই মামলায় মোট ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬ জন ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার।

আরিফুজ্জামান আগে রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছর ৫ আগস্টের পর তাকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এপিবিএনে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। বদলির পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।

জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর সবচেয়ে আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ১৬ জুলাই জিলা স্কুল মোড় থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল আটকাতে এবং রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে দেওয়া বন্ধ করতে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন।

মামলা ও অভিযোগের বিবরণ

আরিফুজ্জামান নিম্নলিখিত মামলায় আসামি হিসেবে আছেন:

  • শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলা (রংপুর, তাজহাট থানা) – ৪ নম্বর আসামি
  • শহীদ মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলা (কোতোয়ালি থানা) – ২১ নম্বর আসামি
  • শহীদ সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলা (কোতোয়ালি থানা) – ১৬ নম্বর আসামি
  • কলেজ শিক্ষার্থী জিম হত্যা চেষ্টা মামলা – ৫ নম্বর আসামি
  • পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী হত্যা চেষ্টা মামলা – ২ নম্বর আসামি

এই মামলাগুলোর মধ্যে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় চার্জ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

আরিফুজ্জামানের গ্রেপ্তারের খবর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, “আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তার জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য গ্রেপ্তার গুরুত্বপূর্ণ।”

তুলনামূলক পরিসংখ্যান

জুলাই আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। বিশেষত, রংপুর অঞ্চলে লাঠিচার্জ এবং গুলির ঘটনায় আহত ও নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

এ ধরনের গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার নজরে আসে এবং দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন করে।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরিফুজ্জামানের গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত সহযোগিতা এই ধরনের আন্তর্জাতিক পলাতক আসামি গ্রেপ্তারে সহায়ক।

অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কোন কর্মকর্তাই আইনের বাইরে থাকবে না।

সংক্ষিপ্তসার

ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া আরিফুজ্জামানের ঘটনা শুধু এক পুলিশ কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের সংবাদ নয়, এটি জুলাই গণহত্যা মামলার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আগামী সময়ে তার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ এবং মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় নতুন দিক তৈরি হবে।

বিশ্লেষকরা প্রশ্ন করছেন, এই গ্রেপ্তার কি ভবিষ্যতে আরও অন্যান্য পলাতক আসামিদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে উৎসাহ যোগাবে?

এম আর এম – ১০২১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button