গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে নৌকায় অগ্নিকান্ডে ১৪৩ মরদেহ উদ্ধার, অনেকে এখনও নিখোঁজ

গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইকুয়েটর প্রদেশে একটি কাঠের নৌকায় গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ১৪৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, কয়েকজন এখনও নিখোঁজ। ইকুয়েটরের রাজধানী এমবানদাকার কাছাকাছি রুকি নদী ও কঙ্গো নদীর সংযোগস্থলে এই নৌকা উল্টে যায় ও দ্রুত ডুবির মুখে পড়ে। अधिकारियों মতে, দুর্ঘটনার কারণে আগুনে পুড়ে যাওয়া ও পানিতে ডুবে যাওয়া—দুই প্রকারেই যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান এবং উদ্ধারকার্যক্রম
- মরদেহ উদ্ধার
প্রদেশের জাতীয় সহকারীদের প্রতিনিধিদলের প্রধান জোসেফিন-প্যাসিফিক লোকুমু অএফপিকে জানান,- প্রথম ধাপে বুধবার (১৬ এপ্রিল) ১৩১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
- পরদিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আরও ১২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ পর্যন্ত মোট ১৪৩ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত হয়ে গেছে।
- নিখোঁজ সংখ্যা
স্থানীয় সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও নিরাপত্তা সূত্র জানান, নৌকায় মোট আরোহীর সংখ্যা “কয়েকশো” হতে পারে। উদ্ধারকাজে ব্যস্ত সময়ও অনেক পরিবার এখনো তাদের স্বজনদের খোঁজ পাচ্ছে না। - আহত ও হাসপাতালে ভর্তি
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কয়েকজন আহত যাত্রীকে এমবানদাকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে; তাঁদের শরীরের জ্বালা-যন্ত্রণা ও দগ্ধ আঘাতের চিকিৎসা চলছে।
দুর্ঘটনার কারণ: রান্নার আগুন বিস্ফোরণ
তারল্যে রান্নার আগুন থেকেই শুরু হয় অগ্নিকাণ্ড—প্রাথমিক তথ্য এটাই।
- স্থানীয় প্রতিবেদক লোকুমু বলেন, “নৌকায় একজন নারী রান্নার উদ্দেশ্যে আগুন জ্বালায়, পাশেই রাখা ছিল জ্বালানি। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে, আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরোহীদের মধ্যে।”
- বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল, যে অনেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন, অনেকে ডুবে গেছেন।
নদীপথে দুর্ঘটনার কারণ ও পূর্বপরিকল্পিত ঝুঁকি
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে সড়ক যোগাযোগের দুর্বলতার কারণে বহু মানুষের যাতায়াত নদীপথেই।
- রাস্তা ও চোরাচালানের অভাব: অপর্যাপ্ত ও নাজুক সড়ক ব্যবস্থা মানুষকে বাধ্য করে নদী ও এর উপশাখায় যাতায়াত করতে।
- ইজতেমায় কাঠের নৌকা: অধিকাংশ যাত্রী কাঠের বড় নৌকায় চড়ে; এসব যানবাহনে প্রায়ই যাত্রী সীমা অতিক্রম হয় এবং নিরাপত্তা মান বজায় রাখা হয় না।
- নথিভুক্তির ঘাটতি: যাত্রী তালিকা না রাখায় দুর্ঘটনায় সঠিক হতাহতের হিসাব নির্ণয় কঠিন হয়।
ইতিহাসের একই ধারার দুর্ঘটনা
ইকুয়েটর প্রদেশে নৌকাডুবির ঘটনা নতুন নয়।
- ২০২৩ সালে: ইকুয়েটরে অন্য একটি নৌকাডুবিতে অন্তত ৪৭ জন নিহত হন।
- ২০২৪ সালের অক্টোবরে: পূর্বাঞ্চলীয় লেক কিভুতে একটি নৌকা উল্টে ২০ জাঁক আহত ও নিহতের খবর আসে।
- ২০১৯ সালে: একই হ্রদে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয় একটি নৌকা ডুবির ঘটনায়।
প্রত্যেকবারই সঠিক যাত্রী সংখ্যা অজানা ও উদ্ধারকাজ জটিল হয়েছে।
সরকার ও উদ্ধার সংস্থার ভূমিকা
- জাতীয় সহকারী দল
দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন উদ্ধার সংস্থা— যেমন ফায়ার সার্ভিস, সিআইভিল ডিফেন্স—মিলিতভাবে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। - আন্তর্জাতিক সহায়তা
আফ্রিকান দেশগুলি মাঝে মাঝে এ ধরনের বিপর্যয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চায়, বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল ও জরুরি রেশন সামগ্রীর জন্য।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক প্রভাব
- স্থানীয় নাগরিক সমাজ
সমাজকর্মী জোসেফ লোকোন্দো বলেন, “মরদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সহায়তা করেছি। মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৫ জন ধরে নিয়েছি, কেননা উদ্ধারকার্যে কিছু দেহ সম্পূর্ণ দগ্ধ।” - পরিবারের যন্ত্রণা
অনেক পরিবার এখনো স্বজনদের খবর পায়নি; গুমের uncertainty মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে।
নিরাপত্তা সুপারিশ ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা
প্রায়ই নদীপথে এমন দুর্ঘটনা রোধে ক্ষেত্রে আহ্বান করা হয়:
- যাত্রী তালিকা নিশ্চিতকরণ: প্রতিটি নৌকায় পূর্ণাঙ্গ যাত্রী নাম তালিকা রাখা।
- নিরাপদ রান্না ব্যবস্থা: আগে রান্নার জন্য পৃথক ও সুরক্ষিত স্থান নিশ্চিত করা।
- জ্বালানির দূরত্ব বজায় রাখা: যাত্রী বসার স্থান থেকে জ্বালানি সামগ্রী আলাদা করে রাখা।
- সুরক্ষা সরঞ্জাম: লাইফ জ্যাকেট, ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার ইত্যাদি বাধ্যতামূলক।
- সঠিক প্রশিক্ষণ: নৌকাচালক ও দুর্ঘটনা মোকাবেলা প্রশিক্ষণ।
মধ্য আফ্রিকার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর নদীপথে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ফলে বারবার রক্তক্ষয়ী দুর্ঘটনা ঘটছে। মাত্র গত এক সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া ১৪৩টি দেহ—এটাই আমাদের ঘনঘন পুনরাবৃত্তিস্বরূপ দুর্ঘটনার হৃদয়বিদারক প্রমাণ। দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ নিলে ও সঠিক নিরাপত্তা বিধি মানলে এ বিপর্যয়-পর্ব থামতে পারে।
লক্ষণীয়: নদী পথের নিরাপত্তা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমন্বিত উদ্যোগই একমাত্র সমাধান। পরোপকারার্থে তৈরি পদক্ষেপ নয়—এতে প্রাণ বাঁচাতে হবে, ভবিষ্যৎ বাঁচাতে হবে।