গাজার শিশুদের পক্ষে কথা বলার জন্য মেলানিয়া ট্রাম্পকে আহ্বান তুরস্কের ফার্স্ট লেডির

ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজার শিশুদের মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান। তিনি এক চিঠিতে গাজাকে “শিশুদের কবরস্থান” আখ্যা দিয়ে ফিলিস্তিনি শিশুদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বিস্তারিত
তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের উদ্দেশে এক খোলা চিঠি পাঠান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযানে প্রতিদিন শিশুদের মৃত্যু ঘটছে, আর এর ফলে সমগ্র অঞ্চল এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে।
চিঠিতে এমিন এরদোয়ান মেলানিয়া ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধকালীন শিশুদের জন্য প্রকাশ্য সমর্থনের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি শিশুদের পক্ষেও একই ধরনের সহমর্মিতা ও পদক্ষেপ জরুরি।
তার ভাষায়, “গাজার হাজারো শিশুর কফিনে লেখা ‘অজ্ঞাত শিশু’ শব্দটি শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, গোটা মানবজাতির বিবেককে নাড়া দিচ্ছে।”
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত দীর্ঘদিনের হলেও সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার সাধারণ মানুষ বিশেষত শিশুরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনই গাজায় নতুন নতুন শিশু হতাহত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সংকট, খাদ্যাভাব এবং নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এর আগেও গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরির জন্য একাধিক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। তবে বৈশ্বিক শক্তিধর দেশগুলোর কার্যকর ভূমিকা না থাকায় পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন ঘটেনি।
চিঠির মূল বক্তব্য
এমিন এরদোয়ান তার চিঠিতে লেখেন, “আজকের গাজা যেন শিশুদের কবরস্থান। এখানে নিরীহ শিশুরা প্রতিদিন বোমা ও গুলির আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে। এই অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠ এক করতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আপনি যেভাবে ইউক্রেনীয় শিশুদের জন্য সংবেদনশীল অবস্থান নিয়েছিলেন, আমি বিশ্বাস করি গাজার শিশুদের ক্ষেত্রেও আপনি সমান উদ্যোগী হবেন। কারণ, শিশুদের বাঁচানো মানেই ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের ফার্স্ট লেডির এই চিঠি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
একাধিক বিশ্লেষকের মতে, মেলানিয়া ট্রাম্প যদি ফিলিস্তিনি শিশুদের বিষয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন, তবে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গাজার প্রতি সহমর্মিতা আরও বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি এটি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ওপরও একটি নৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি
জাতিসংঘের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় শিশু মৃত্যুর হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, বিদ্যুতের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া, হাজার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে দিন কাটাচ্ছে।
শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শিক্ষার সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো প্রজন্ম এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি ইস্যুতে সোচ্চার। এমিন এরদোয়ানের এই চিঠি শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, রাজনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকার এক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, “মেলানিয়া ট্রাম্প যদি ফিলিস্তিনি শিশুদের পাশে দাঁড়ান, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কেও নতুন মাত্রা আনতে পারে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপরও আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে।”
তুরস্কের ফার্স্ট লেডির এই উদ্যোগ গাজার শিশুদের দুর্দশা আবারও বৈশ্বিক আলোচনায় নিয়ে এসেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, বিশ্বশক্তিগুলো কি এই আহ্বানে সাড়া দেবে? ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি এই আবেদনও পূর্বের মতো কেবল আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
এম আর এম – ০৯৯৭, Signalbd.com