বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ঘোষিত টানা ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। রোববার (১০ আগস্ট) বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সরকারের সঙ্গে মালিকদের বৈঠকে সমঝোতার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বৈঠক শেষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত
বৈঠকে পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষ নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন। আলোচনায় মালিকদের পক্ষ থেকে পূর্বে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মালিকরা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো পর্যালোচনার আশ্বাস পাওয়ার পরই তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পরিবহন মালিকদের দাবিসমূহ
বৈঠকে আলোচিত ৮ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারা সংশোধন এবং কিছু অতিরিক্ত ধারা পুনর্বিবেচনা
- বাণিজ্যিক মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা
- সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পুরোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা
- বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করে পূর্বের হার বহাল রাখা
- রিকন্ডিশন্ড বাণিজ্যিক গাড়ি আমদানির সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা
- সড়ক দুর্ঘটনায় জব্দ হওয়া যানবাহন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা
ধর্মঘটের পূর্বপটভূমি
এর আগে ৮ আগস্ট পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে তাদের দাবি পেশ করে। সেই সঙ্গে আল্টিমেটাম দিয়ে জানায়, দাবিগুলো পূরণ না হলে ১২ আগস্ট থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করবে তারা। এই ঘোষণার পর সারাদেশে যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই আগেভাগে যাতায়াতের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন।
যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
ধর্মঘটের হুমকিতে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। বাস টিকিট বিক্রি, পণ্য পরিবহন, বাজারে সরবরাহ—সব ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে আজকের বৈঠকে সমঝোতার পর যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ঢাকার গাবতলী টার্মিনালে কথা বললে এক যাত্রী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কয়েকদিন বিপাকে পড়তে হবে। এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছি।”
অর্থনৈতিক প্রভাবের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে দৈনিক প্রায় কয়েক কোটি টাকার পণ্য ও যাত্রী পরিবহন হয় বাস সার্ভিসের মাধ্যমে। ধর্মঘট চললে দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য এবং শিল্প উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে স্বাভাবিক পরিবহন ব্যবস্থা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার ও মালিকপক্ষের মধ্যে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব। এক পরিবহন বিশ্লেষক বলেন, “প্রতিবার দাবিদাওয়া না মিটলেই ধর্মঘট ডাকা হলে জনজীবনে ভোগান্তি তৈরি হয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য নীতিমালার সংস্কার এবং প্রয়োগ জরুরি।”
সারসংক্ষেপ
বাস মালিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা আপাতত স্বাভাবিক হতে চলেছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট এড়াতে সরকার ও মালিকপক্ষের মধ্যে কার্যকর সমঝোতা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়, আলোচনায় দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো কত দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।
এম আর এম – ০৭৭৫, Signalbd.com



