গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা: শুজাইয়ায় ৩৫ জন নিহত, ধ্বংসস্তূপে আটকে বহু

গাজা উপত্যকার শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৫ জন। নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ৮০ জন মানুষ। এই হামলাকে চলমান সংঘাতের অন্যতম ভয়ঙ্কর হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে ঘনবসতিপূর্ণ শুজাইয়া অঞ্চলে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী একের পর এক বোমা বর্ষণ করে। লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবন ও আশপাশের বাড়িঘর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুরো এলাকা যেন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে—এই হামলার ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই ভয়াবহ ছিল।
নারী ও শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা হাতে-পায়ে খুঁড়ে মানুষ খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আহতদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ রক্তের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে জনসাধারণকে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে।
একাধিক এলাকায় চালানো হয়েছে হামলা
শুধু শুজাইয়ায় নয়, একই দিন ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে গাজার দক্ষিণের রাফা, খান ইউনিস, দেইর আল–বালাহ, বেইত হানুনসহ আরও কয়েকটি এলাকায়। এসব হামলায় আরও অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন, তবে নিশ্চিত সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু এপ্রিল মাসেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪০০-র বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বড় অংশই শিশু ও নারী।
গাজার পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে
গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে প্রতিটি দিন যেন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের এই সর্বশেষ হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতোমধ্যেই একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং হামলার তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গাজার পরিস্থিতি এক অমানবিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”