ফুটবলখেলা

নেপালের জাল ভাসিয়ে সাগরিকায় সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

 সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলে সেরা হলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। একাই চার গোল করে হিরো বনে গেলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেই দুর্দান্ত বাংলাদেশ

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে ছিল না কোনো নির্দিষ্ট ফাইনাল ম্যাচ। তবে রাউন্ড রবিন পদ্ধতির কারণে শেষ ম্যাচই হয়ে দাঁড়ায় অলিখিত ফাইনাল। বাংলাদেশ ও নেপাল উভয়েই আগের পাঁচ ম্যাচে জয় পেয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছিল। এমন সমীকরণে নেপালের বিপক্ষে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হতো বাংলাদেশ। তবে ড্র নয়, প্রতিপক্ষকে একদম চূর্ণ করে শিরোপা ঘরে তুলেছে লাল-সবুজের মেয়েরা।

কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে মোসাম্মৎ সাগরিকার একক নৈপুণ্যে ৪-০ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। ম্যাচজুড়েই বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। খেলার সপ্তম মিনিটেই সাগরিকা গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। এরপর একের পর এক আক্রমণে নেপালকে কোণঠাসা করে রাখে বাংলার বাঘিনীরা।

সাফে সাগরিকার গোল ঝড়

ম্যাচের নায়ক বলতে গেলে শুধুই মোসাম্মৎ সাগরিকা। সাম্প্রতিক সময়ে লাল কার্ডের কারণে মাঠের বাইরে থাকলেও ফিরেই যেন ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তিনি। প্রথমার্ধে একটি গোল করলেও দ্বিতীয়ার্ধে ছিল তাঁর একক শো।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাগরিকা। পরে করেন আরেকটি গোল। চার গোল করে একাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন তিনি। এ পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নারী ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য

বাংলাদেশ ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। পিটার বাটলারের প্রশিক্ষণে শিষ্যরা বারবার নেপালের রক্ষণে আঘাত হানেন। সাগরিকার প্রথম গোলের পর আরও বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ তৈরি হয়, যদিও সেগুলো রূপ নেয়নি সফলতায়।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের মেয়েরা যেন এক অন্যরকম চেহারায় হাজির হয়। সাগরিকার টানা গোলগুলো নেপালকে দিশেহারা করে তোলে। খেলার শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত বলের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশই। পুরো ম্যাচে নেপাল কার্যত কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি।

অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা

টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। সেসময় ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও বাংলাদেশ পরে দুই গোল হজম করে বসে। শেষ মুহূর্তে তৃষ্ণার গোলে জয় নিশ্চিত হলেও সেই ম্যাচের অভিজ্ঞতা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়।

সেই ম্যাচে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় সাগরিকাকে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এবার ফিরেই চার গোল করে নেপালকে জবাব দিয়েছেন তিনি। কোচ বাটলারও ম্যাচের পর বলেন, “সেই আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতাই আমাদের আজকের জয়কে সহজ করে দিয়েছে। মেয়েরা শিখেছে, কিভাবে প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।”

নারী ফুটবলে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নারী ফুটবল এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে। কিছুদিন আগেই জাতীয় দল প্রথমবারের মতো এএফসি এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়েছে। এবার অনূর্ধ্ব-২০ দল সাফ জয়ের মাধ্যমে সেই ধারা অব্যাহত রাখলো।

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, দেশের নারী ফুটবলে এমন ধারাবাহিক উন্নয়ন কেবল সঠিক পরিকল্পনা ও তরুণ প্রতিভাদের সমন্বয়ের ফল। এক সময় যারা নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন, এখন তাঁরাই আশাবাদী হয়ে উঠছেন।

সামাজিক দিক থেকে ইতিবাচক বার্তা

নারী ফুটবলে এই জয় কেবল ক্রীড়াক্ষেত্রেই নয়, সামাজিকভাবেও একটি বড় বার্তা বহন করে। বাংলাদেশের মতো দেশে নারীদের এগিয়ে আসার পথ আজও অনেক ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জিং। তবে সাফ জয়ের মতো অর্জন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেয়।

খেলাধুলায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই ধরনের আন্তর্জাতিক সাফল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মেয়েরা আজ কেবল চ্যাম্পিয়ন নয়, হাজারো মেয়ের অনুপ্রেরণা।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য আরও বড়

সাফ জয়ের পর কোচ পিটার বাটলার এবং অধিনায়ক উভয়েই জানিয়েছেন, এটাই শেষ নয়। তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো এএফসি এবং বিশ্ব পর্যায়ের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করা।

সাগরিকা ম্যাচশেষে বলেন, “আমরা শুধু সাফ জয়ের জন্য খেলিনি, আমরা প্রমাণ করতে চেয়েছি, মেয়েরাও পারে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সামনে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।”

উপসংহার

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে মোসাম্মৎ সাগরিকার নেতৃত্বে দুর্দান্ত এক জয় পেল বাংলাদেশ। চার গোল করে তিনি শুধু ম্যাচ জেতাননি, একটি দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সামনের দিনগুলোতে এমন আরও সাফল্য দেখার অপেক্ষায় থাকল পুরো জাতি।

এম আর এম – ০৪৫৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button