বিশ্ব

১৭ হাজার শিশু নিহত, ৩৯ হাজার শিশু অনাথ হয়েছে

ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় চলমান হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে, এবং ৩৯ হাজারেরও বেশি শিশু তাদের এক বা উভয় পিতামাতাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েছে। এই তথ্য সম্প্রতি ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মিডল ইস্ট মনিটর দ্বারা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনে শিশুদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র

গত ৫ এপ্রিল, ফিলিস্তিনি শিশু দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজায় শিশুদের শিক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেছেন,

“গাজা, জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের এরিয়া সি এলাকায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সরাসরি আক্রমণ চলছে, যার কারণে শিশুদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাগত পরিবেশ তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

অধিকৃত এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার শিশু শরণার্থী, আহত বা মৃত্যুবরণ করছে।

গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট: ৫০ হাজারের বেশি হতাহত

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬০ শতাংশের বেশি হতাহত নারী ও শিশু, যার মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি হতাহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস জানায়, গাজায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ শতাংশ শিশু, এর মধ্যে ২১ লাখ শিশু গাজায় বসবাস করছে, এবং ৩৪ লাখ শিশু পশ্চিম তীরে রয়েছে।

অনাথ হওয়ার কষ্টে ৩৯ হাজার শিশু

এক নতুন প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ৩৯ হাজারেরও বেশি শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ হয়েছে। এই সংখ্যা গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা ও ক্ষতিপূরণের অভাব তুলে ধরে। ইতিমধ্যেই, ১৭ হাজার শিশু তাদের উভয় অভিভাবককে হারিয়েছে, ফলে তারা এখন একা, কোনো সমর্থন বা পরিচর্যা ছাড়া জীবনযাপন করছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং শরণার্থী সংকট

ইসরায়েলি হামলার পর গাজার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য কোনো ধরনের মৌলিক মানবিক সহায়তা বা আশ্রয়ের ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত হয়নি। গাজার প্রায় প্রতিটি পরিবার এই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে, যেখানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা ও বোমাবর্ষণ চলছে অবিরাম।

গাজার শিক্ষা ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা

ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গাজার অনেক স্কুল ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে লাখ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষত, শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না কারণ সেখানে তারা নিরাপদ নয়।

“ফিলিস্তিনি শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা ও তাদের শিক্ষার পরিবেশ সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে,” মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে।

গাজার বিপর্যয়

গাজার মানবিক বিপর্যয় এবং শিশুদের প্রতি ইসরায়েলি হামলার পরিণতি শুধু অঞ্চলটির জন্য নয়, এটি একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন, যেন তারা গাজার শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এই বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যবস্থা নেবে।


গাজায় ১৭ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু, তাদের জন্য শোক ও বিপর্যয়ের ছবি একটি মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধ্বংস এবং শিশুদের নিরাপত্তাহীন পরিবেশ, পুরো পৃথিবীকে এক গুরুতর চ্যালেঞ্জের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক সহায়তার গুরুত্বকে আরো একবার জোরালোভাবে তুলে ধরছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button