বিশ্ব

লোহিত সাগরে সাবমেরিন ডুবে ছয় পর্যটকের মৃত্যু

লোহিত সাগরের মিসরীয় উপকূলে পর্যটকবাহী একটি সাবমেরিন ডুবে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের সবাই রাশিয়ার নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছেন মিসরের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার মিসরের জনপ্রিয় পর্যটন শহর হুরঘাদার উপকূলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার বিবরণ

স্থানীয় সূত্র ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, ডুবে যাওয়া সাবমেরিনটির নাম ‘সিন্দবাদ’। এটি মূলত পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ ডুবোযান, যা সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করে পর্যটকদের সামুদ্রিক জীবনের অভিজ্ঞতা দেয়। সাবমেরিনটিতে রাশিয়ার ৪৫ জন পর্যটক ছিলেন, যাদের মধ্যে ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

রাশিয়ার হুরঘাদাস্থ কনস্যুলেট জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং বেশিরভাগ যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে নিখোঁজ পর্যটকদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

উদ্ধার তৎপরতা ও হাসপাতাল পরিস্থিতি

দুর্ঘটনার পরপরই মিসরের নৌবাহিনী ও স্থানীয় উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে হুরঘাদার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসাধীন কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মিসরের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, উদ্ধার কার্যক্রম এখনো চলছে এবং নিখোঁজ পর্যটকদের সন্ধানে অতিরিক্ত উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে।

সাবমেরিন দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ

সাবমেরিনটি কীভাবে ডুবল, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যান্ত্রিক ত্রুটি, নেভিগেশনজনিত সমস্যা অথবা অনিয়ন্ত্রিত পানির চাপের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবমেরিনটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে শেষবার সংকেত পাওয়ার পরই সেটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি পানির গভীরে ডুবে যায়।

মিসরের পর্যটন শিল্প ও নিরাপত্তা উদ্বেগ

লোহিত সাগর তার প্রবাল প্রাচীর, সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং ডাইভিং স্পটগুলোর জন্য বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। বিশেষত, রুশ পর্যটকদের সংখ্যা মিসরে ক্রমবর্ধমান। ২০২৪ সালে মিসর পর্যটন খাত থেকে ১,৪১০ কোটি ডলার আয় করেছে, যা সুয়েজ খাল থেকে আয়ের দ্বিগুণেরও বেশি।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিসরে পর্যটন-সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে একটি পর্যটক ডাইভিং নৌকা শক্তিশালী ঢেউয়ের ধাক্কায় কয়েক মিনিটের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল, যেখানে চারজন প্রাণ হারান। ২০২৩ সালের জুনে ঝড়ের কবলে পড়ে আরেকটি নৌকা ডুবে যায়, তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী পদক্ষেপ ও তদন্ত কার্যক্রম

মিসরের কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাবমেরিন ও অন্যান্য সামুদ্রিক পর্যটনযানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মিসরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে। এছাড়া, নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করছে।

উপসংহার

এই দুর্ঘটনা মিসরের পর্যটন খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিখোঁজ পর্যটকদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে, এবং দুর্ঘটনার আসল কারণ নির্ধারণের জন্য তদন্ত চলমান।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button