বিশ্ব

দক্ষিণ সুদান ফের গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে, জাতিসংঘের সতর্কতা

জাতিসংঘ দক্ষিণ সুদানে ফের গৃহযুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মিশন (UNMISS)। সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে দক্ষিণ সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশনের প্রধান নিকোলাস হেসম এ তথ্য জানান। খবর আল-জাজিরার।

সঙ্কটের মূল কারণ

দক্ষিণ সুদানের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূল কেন্দ্রবিন্দু প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং উপরাষ্ট্রপতি রিক মাচারের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব। ২০১৮ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গঠিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকারও এই বিভাজন ঠেকাতে পারেনি। জাতিসংঘের মতে, কির ও মাচার যদি নিজেদের জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেন, তাহলে শান্তি আলোচনা সম্ভব হবে।

নিকোলাস হেসম আরও বলেন, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ঘৃণামূলক বক্তব্য জাতিগত সংঘাত উসকে দিচ্ছে, যা দক্ষিণ সুদানে নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে।

গৃহযুদ্ধের নতুন ইঙ্গিত

দক্ষিণ সুদান ২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত। স্বাধীনতার পরপরই গৃহযুদ্ধে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। ২০১৮ সালে শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও দেশটিতে শান্তি পুরোপুরি স্থায়ী হয়নি।

মার্চের প্রথমদিকে উপরাষ্ট্রপতি রিক মাচারের মিত্র হোয়াইট আর্মির যোদ্ধারা নীল রাজ্যের নাসির কাউন্টির একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ সুদানের সরকারি সৈন্যরা রাজধানী জুবায় মাচারের বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। জাতিসংঘ জানায়, সামরিক বাহিনী নীল নদের ওপারে বিরোধী সম্প্রদায়গুলোর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে।

মানবিক সংকটের আশঙ্কা

জাতিসংঘ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতার ফলে আনুমানিক ৬৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচারে হামলার ফলে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, দক্ষিণ সুদানে নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে দেশটিতে আরও বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) আশঙ্কা করছে, সংঘাত বাড়লে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়ের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে পালাতে পারে।

শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা

জাতিসংঘ বলেছে, তারা নতুন করে গৃহযুদ্ধ রোধে কাজ করছে এবং আফ্রিকান ইউনিয়নসহ আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন (UNMISS) দক্ষিণ সুদানে জাতিগত সংঘাত প্রশমনের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করছে।

নিকোলাস হেসম বলেন, “আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট কির এবং উপরাষ্ট্রপতি মাচার যদি একে অপরকে বিশ্বাস না করেন এবং শান্তি চুক্তির শর্তাবলী মেনে না চলেন, তাহলে দেশটি আরও বড় সংকটে পড়বে।”

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ

আফ্রিকান ইউনিয়ন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ সুদানে শান্তি বজায় রাখার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ সুদানের নেতাদের প্রতি শান্তিচুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দক্ষিণ সুদানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সকল পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করে সংলাপে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

উপসংহার

দক্ষিণ সুদান আবারও এক ভয়াবহ সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং উপরাষ্ট্রপতি রিক মাচারের ওপর। যদি তারা শান্তি চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলে এবং জাতিগত সম্প্রীতি বজায় রাখে, তাহলে দেশটি ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ এড়াতে পারবে। কিন্তু যদি সংঘাত চলতে থাকে, তাহলে দক্ষিণ সুদানের জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button