বিশ্ব

তুরস্কে কারাবন্দি একরাম ইমামোগলুকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা

তুরস্কের বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) কারাবন্দি নেতা এবং ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সোমবার দলের এক মুখপাত্র এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কারাবন্দি অবস্থা ও অভিযোগ

৫৮ বছর বয়সী একরাম ইমামোগলু তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। ১৯ মার্চ এক বিশেষ অভিযানে তাকে আটক করা হয় এবং পরে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডার জালিয়াতি ও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে এসব অভিযোগ উপস্থাপন করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বর্তমানে তিনি ইস্তাম্বুলের সিলিভ্রি কারাগারে রয়েছেন।

তবে একরাম ইমামোগলু তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ১৯ মার্চ আটকের পর রিমান্ডে নেওয়ার আগে তিনি বলেন, “আমি কখনও মাথা নত করব না।”

রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বিক্ষোভ

একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে ইমামোগলুর গ্রেপ্তার বিরোধী দল এবং তার সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। গত কয়েকদিন ধরে তুরস্কজুড়ে তার মুক্তির দাবিতে তীব্র বিক্ষোভ চলছে। সূত্র অনুযায়ী, দেশটির ৮১টি প্রদেশের অন্তত ৫৫টিতে সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে।

রোববার রাতে তুরস্কজুড়ে হওয়া বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এই অস্থিরতা ২০১৩ সালের গাজি পার্ক আন্দোলনের পর দেশটির সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ইমামোগলুর রাজনৈতিক উত্থান

২০১৯ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথমবার বিজয়ী হন ইমামোগলু। তবে তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেয়। পুনঃনির্বাচনে আরও বড় ব্যবধানে বিজয়ী হন ইমামোগলু, যা তাকে দেশব্যাপী একজন শক্তিশালী বিরোধী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

সম্প্রতি তিনি ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই সিদ্ধান্তের পরপরই তাকে আটক করা হয়, যা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছে বিরোধী দল।

সরকারের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং তার রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) দাবি করেছে, ইমামোগলু নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-এর সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছেন। তবে সিএইচপি এবং ইমামোগলু এই অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, এই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক নয়, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অভিযোগগুলোকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত’ এবং ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তুরস্কের সরকারকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইমামোগলুর মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে পারে?

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের ফলে তুরস্কের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে। বিরোধী দল সিএইচপি এই ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছে এবং ইমামোগলুর মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে সরকার দমননীতির মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই সংকট অব্যাহত থাকলে এরদোয়ানের সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

উপসংহার

তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে একরাম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দল ও তার সমর্থকরা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে, যেখানে সরকার বলছে এটি দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button