আঞ্চলিক

যশোরে গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে ৭ জনকে জিম্মি করে সোনার দোকানে ডাকাতি

Advertisement

যশোরের অভয়নগর উপজেলার মশিয়াহাটী বাজারে গভীর রাতে সংঘটিত হয়েছে এক দুঃসাহসিক ডাকাতি। রবিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র দল ‘সৌখিন জুয়েলার্স’ নামের একটি সোনার দোকানে হামলা চালায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাকাতরা বাজারে প্রবেশ করেই সাতজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত বেঁধে মুখে টেপ লাগিয়ে ফেলে রাখে। এরপর তারা দোকানের কলাপসিবল গেট ও শাটার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে লকারের তালা ভেঙে সোনা ও রুপার অলঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।

দোকানের মালিক গৌতম কর্মকার জানান, তিনি রাত ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন। রাত তিনটার দিকে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল আসে—তাঁর দোকানে ডাকাতি চলছে। ভয়ে তিনি বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। সকালে দোকানে গিয়ে দেখতে পান, লকার ভাঙা এবং সমস্ত গয়না উধাও।

তাঁর দাবি, প্রায় ২ ভরি সোনার গয়না ও ২৪ ভরি রুপার অলঙ্কারসহ ৪ লাখ টাকার বেশি সম্পদ লুট করেছে ডাকাতদল।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা: আতঙ্কে রাতজাগা গ্রামবাসী

স্থানীয় কৌশিক দাস নামের এক কিশোর জানান, রাত আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে তিনি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই সশস্ত্র লোকেরা তাকে ধরে ফেলে, হাত বেঁধে মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। কৌশিক বলেন, “ভোর চারটার দিকে কৌশলে হাত খুলে অন্যদেরও মুক্ত করি।”

স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমা বিশ্বাস জানান, ডাকাতদল বাজারে ডাকাতি শেষে তাঁদের বাড়ির সামনেও আসে। প্রতিমা বিশ্বাসের গলার সোনার হারটি অস্ত্রের মুখে কেড়ে নেয় তারা। পুরো এলাকা তখন নিস্তব্ধ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

ডাকাতির ধরন: পরিকল্পিত ও সংগঠিত অপরাধের ইঙ্গিত

ঘটনার ধরণ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটি কোনো সাধারণ চুরির ঘটনা নয়, বরং একটি সংগঠিত ডাকাতি। সশস্ত্র দলটি পরিকল্পিতভাবে বাজারে প্রবেশ করে আগে থেকেই নজরদারি চালিয়ে সময় নির্ধারণ করে অভিযান চালায়। তাদের ব্যবহৃত পদ্ধতি এবং জিম্মি করে রাখা মানুষের সংখ্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত একটি চক্র।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম রবিউল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে এটি ডাকাতি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

যশোরে বাড়ছে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা: ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ

শুধু অভয়নগর নয়, গত কয়েক মাসে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটছে। গেল জানুয়ারিতে উপশহর এলাকার একটি ইজিবাইক শোরুমে ২৫ লাখ টাকার ব্যাটারি লুটের ঘটনা ঘটে। তারও আগে শংকরপুর বাসটার্মিনাল এলাকায় একটি টায়ারের দোকানে ১৮ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছিল। এসব ঘটনার বেশিরভাগই এখনো তদন্তাধীন।

ব্যবসায়ী মহলে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, “একটির পর একটি ডাকাতির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনকে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

নাগরিক মহলের অভিযোগ, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে রাত্রিকালীন টহল কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, “দাগি অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়লেও অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। এতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।”

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, টহল জোরদার করা হয়েছে এবং চুরি-ডাকাতি দমনে বিশেষ অভিযান চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, “কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিচার করা ঠিক নয়। দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

নজরদারি ও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার প্রয়োজন

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে চুরি ও ডাকাতির হার বেড়েছে। তাদের মতে, বাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, রাতে টহল বাড়ানো এবং দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ডাকাতরা সাধারণত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে। তাদের রুখতে হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে হবে এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে।”

আতঙ্কে এলাকা, কঠোর পদক্ষেপের দাবি

মশিয়াহাটী বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেক দোকানদার রাতে দোকানে পাহারার ব্যবস্থা শুরু করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ডাকাতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার না করলে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা এখনো এলাকাবাসীর নজরে আসেনি। তবে সকলের প্রত্যাশা—প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপে যেন এই ধরনের দুঃসাহসিক অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ হয়।

এম আর এম – ২০৭৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button