ইসরায়েলের নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এই হামলা আঁচ করতে ব্যর্থতার জন্য বারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তের প্রক্রিয়া
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা বৈঠক করে বারকে বরখাস্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে। নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে বারকে বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে আগামী ১০ এপ্রিল।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য
নেতানিয়াহু গত রোববার এক ভিডিও বিবৃতিতে বারকে বরখাস্ত করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বারের সঙ্গে তাঁর চলমান অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।”
ইসরায়েলিদের প্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহুর পদক্ষেপটি ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলার বিরুদ্ধে জেরুজালেমে চলা বিক্ষোভে যোগ দেন হাজারো ক্ষুব্ধ ইসরায়েলি।
গাজার পরিস্থিতি
গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তারা বলছে, হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে। এই হামলার মধ্য দিয়ে গাজায় দুই মাস ধরে চলা ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের নতুন এই হামলায় অন্তত ৫৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
শিন বেতের ভূমিকা
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্থাটির কার্যক্রমসহ সদস্যপদের তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপন রাখা হয়। বরকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছেন।
আইনগত জটিলতা
ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা বলেছেন, পদক্ষেপটির বৈধতা মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত বারকে বরখাস্ত করা যাবে না। তিনি নেতানিয়াহুর একজন কট্টর সমালোচক এবং নিজেও বরখাস্ত প্রক্রিয়ার মুখোমুখি।
হামাসের হামলা ও পরিণতি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
রোনেন বারের বরখাস্তের ঘটনা ইসরায়েলি সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই পরিস্থিতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।