বিশ্ব

ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে যুক্তরাজ্যে ২০ দেশের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে যুক্তরাজ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছেন অন্তত ২০টি দেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) যুক্তরাজ্যের নর্থউডে স্থায়ী যৌথ সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ বা আগ্রহীদের জোট ইউক্রেনে পশ্চিমা-নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বিকেলে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে ব্যারো পরিদর্শন করবেন এবং ব্রিটেনের পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী মন্ত্রী লুক পোলার্ড জানিয়েছেন, এই জোটকে ‘বিশ্বাসযোগ্য শক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাজ্য, যা ইউক্রেনকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি উপভোগ করতে এবং পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনে কোনো ন্যাটো সৈন্যের উপস্থিতি মস্কো সহ্য করবে না।

এই পরিকল্পনার মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনীহা—তারা প্রয়োজনীয় বিমান সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত নয়, যা সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়

  • শান্তিরক্ষী বাহিনীর কাঠামো ও কর্মপরিধি:
    • শান্তিরক্ষী বাহিনীর আকার, গঠন এবং পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করা।
    • তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, যেমন – যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তা প্রদান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা।
  • অর্থায়ন ও লজিস্টিক সহায়তা:
    • শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যানবাহন এবং অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করা।
    • এই মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল কীভাবে সংগ্রহ করা হবে এবং কোন দেশ কতটুকু অবদান রাখবে তা নিয়ে আলোচনা করা।
  • রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
    • রাশিয়ার বিরোধিতা সত্ত্বেও কীভাবে এই মিশন বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করা।
    • জাতিসংঘের অনুমোদন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থন কীভাবে আদায় করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা।
    • ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • ইউক্রেনের অবকাঠামো পুনর্গঠন।

যুক্তরাজ্যের ভূমিকা:

যুক্তরাজ্য এই শান্তিরক্ষী মিশনের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। যুক্তরাজ্য এই মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

এই উদ্যোগের প্রতি বিভিন্ন দেশের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু দেশ এই শান্তিরক্ষী মিশনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, আবার কিছু দেশ রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার কারণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া:

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনে কোনো ন্যাটো সৈন্যের উপস্থিতি মস্কো সহ্য করবে না। তিনি এই উদ্যোগকে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা:

যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তিরক্ষী মিশনে সরাসরি সৈন্য পাঠাতে আগ্রহী নয়। তবে তারা এই মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করছে।

এই বৈঠকের ফলাফল ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের জন্য এই সময়টা খুবই সংকটপূর্ণ। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বহু মানুষ তাদের ঘর বাড়ি হারিয়েছেন। এই শান্তিরক্ষী বাহিনী যদি ইউক্রেনে যায়, তবে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবে।

ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়ায় এই সভা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button