এসএওসিএলের কাছে সরকারি এলপি গ্যাস সরবরাহ স্থগিত

সরকারি এলপি গ্যাস ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল)-এর কাছে গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। টেলিভিশন প্রতিবেদন ও দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।
এসএওসিএলের কাছে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) এর অনুকূলে সরকারি এলপি গ্যাস সরবরাহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ৬ আগস্ট বুধবার প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসএওসিএলের বিরুদ্ধে গ্যাস ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থায় অসঙ্গতির বিষয়টি তুলে ধরে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় এবার সরাসরি গ্যাস সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অনিয়মের পেছনের প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান “ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ডিগ্রি”-তে প্রচারিত হয়, সরকারি এলপি গ্যাস অবৈধভাবে বেসরকারি সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত এসএওসিএল। রিপোর্টে উঠে আসে, সরকারি গ্যাস কৌশলে বেসরকারিভাবে বাজারে সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছে।
এই অনুসন্ধান প্রকাশের পর থেকেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা অনিয়মের প্রমাণ সংগ্রহ করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান
দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরাসরি বিপিসি কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসএওসিএলের এলপি গ্যাস ব্যবস্থাপনায় গুরুতর গাফিলতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।
এছাড়া, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ এলপি গ্যাস যেভাবে বেসরকারি খাতে প্রবাহিত হয়েছে, তা বিপিসির নিয়ন্ত্রণ কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
সরবরাহ বন্ধের প্রভাব
সরকারি এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধে এসএওসিএলের গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যারা এই কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন, তাদের ভবিষ্যৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে পরিবহন ও শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীরা ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।
তবে বিপিসি জানিয়েছে, যথাযথ তদন্ত ও প্রশাসনিক পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নেওয়া হবে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞদের মত
বাণিজ্য ও জ্বালানি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরেছে।
বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন,
“এটা শুধু একটি কোম্পানির দুর্নীতি নয়, বরং পুরো এলপি গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকাশ করেছে। সময় এসেছে এ খাতে প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক সংস্কার আনার।”
তিনি আরও বলেন, যদি যথাসময়ে এসব অনিয়ম রোধ করা না হয়, তবে তা ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
সরবরাহ স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক হলেও, এসএওসিএল-এর বিরুদ্ধে তদন্তের ফল অনুযায়ী আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। তদন্তে যদি অপরাধের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল, আর্থিক জরিমানা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিপিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্যান্য জ্বালানি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যাতে কোনো রকম অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সারসংক্ষেপ
এসএওসিএলের কাছে সরকারি এলপি গ্যাস সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত শুধু একটি কোম্পানির জন্য বার্তা নয়, বরং জ্বালানি খাতে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার দাবি তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এম আর এম – ০৭৩৪, Signalbd.com