বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান: লোহিত সাগরে হামলা বন্ধের আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ঘোষণা করেছেন যে, হুতিদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না তারা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধের ঘোষণা দেয়। শনিবার রাতে ইয়েমেনের হুতিদের বিভিন্ন নিশানায় হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী, যার ফলে অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ শিশু ও দুজন নারী রয়েছে। আহত হয়েছে ৯৮ জন।

হামলার পটভূমি

গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে হুতিদের বিরুদ্ধে এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। এই হামলা শুরু হয়েছে যখন ওয়াশিংটন তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে।

হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল-হুতি বলেছেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে আমরা লোহিত সাগরে তাদের জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকব।” তিনি আরও বলেন, “তারা যদি তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রাখে, আমরাও জবাব দেওয়া জারি রাখব।”

হামলার প্রভাব

হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরো যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছে। অন্যদিকে, মস্কো হামলা বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হুতি সামরিক মুখপাত্র দাবি করেছেন, তারা লোহিত সাগরে মার্কিন বিমানবাহীর রণতরিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের উড়োজাহাজগুলো হুতিদের ১১টি ড্রোন গুলি করে নষ্ট করেছে। তবে, ইয়েমেন উপকূলে একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত হয়েছে বলে তাদের সেনারা শনাক্ত করতে পেরেছেন, যা তাদের কাছে কোনো হুমকি মনে হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

পিট হেগসেথ ফক্স নিউজের “সানডে মনিং ফিউচারসে” বলেছেন, “হুতিরা যখনই বলবে আমরা আপনাদের জাহাজে হামলা বন্ধ করব, তখনই আমরা তাদের ড্রোনে গুলি করা থামিয়ে দেব।” তিনি আরও বলেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ।”

হুতিদের ইতিহাস

এক দশকের বেশি সময় ধরে হুতিরা সশস্ত্র সংগ্রাম করছে এবং বর্তমানে ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

শনিবার ট্রাম্প হুতিদের লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায়, তিনি তাদের ‘নরক বৃষ্টির’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি তেহরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয়, আমেরিকা তোমাকে সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে।”

ইরানের প্রতিক্রিয়া

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার হোসেইন সালামি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে বলেছেন, “হুতিদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিয়েছে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি তারা তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করে, আমরা দৃঢ়ভাবে তার ভয়াবহ জবাব দেব।”

এই পরিস্থিতি ইয়েমেনের জনগণের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যুদ্ধের ফলে মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এখন প্রশ্ন হলো, এই সংঘাতের সমাধান কীভাবে হবে? এবং কিভাবে ইয়েমেনের জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button