বিশ্ব

পুতিন নাকি ট্রাম্প: কার হাতে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির লাগাম

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশে দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক উদ্যোগ ‘নষ্ট’ করার চেষ্টা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুতিনের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এই যুদ্ধ শেষ করতে পারবে।

পুতিনের কঠোর শর্ত

জেলেনস্কি বলেছেন, “শুরু থেকেই, এমনকি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার আগেই পুতিন কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত আরোপের মাধ্যমে এই কূটনৈতিক উদ্যোগকে নষ্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।”

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগকে গ্রহণ করেছেন, তবে এর বিস্তারিত নিয়ে তিনি অসংখ্য প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার ওই অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল।

যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা

পুতিন অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনের বাহিনী কুরস্কের ‘বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ’ করেছে, যা কিয়েভ অস্বীকার করেছে। তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইউক্রেন কি আবার সেনা জড়ো করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং রসদ সংগ্রহ করবে?

পুতিন বলেছেন, “২ হাজার কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে কেউ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করছে কি না এবং ঠিক কোথায় করছে, তা কে খুঁজে বের করবে?”

জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া

পরদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, আকাশে ও সমুদ্রে যুদ্ধবিরতি যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করার জন্য ইউক্রেনই যথেষ্ট। তবে সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নজরদারি ও গোয়েন্দা সক্ষমতার প্রয়োজন পড়বে।

সংকটের মূল কারণ

জেলেনস্কি বিশ্বাস করেন, পুতিন যেসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলোর সমাধান করা সম্ভব। তবে পুতিনের অপছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা বেশি কঠিন হবে। পুতিন বলেছেন, এই সংকটের মূলে যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করতে হবে। তিনি ন্যাটো জোটের বিস্তার নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা তুলে ধরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

এখন প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে? প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারেন, যেমনটা ইউক্রেন চাইছে। তিনি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন অথবা ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়াতে পারেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্প রাশিয়াকে আরও বেশি ছাড় দিয়ে একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার প্রস্তাবও দিতে পারেন, যা কিয়েভের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

কূটনৈতিক চাপ

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বেশিরভাগ যোগাযোগ গোপনে হচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনের ওপর প্রকাশ্যেই কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জেলেনস্কি বারবার পুতিনের সময়ক্ষেপণের কৌশলের কথা উল্লেখ করে পশ্চিমাদের রাশিয়ার ওপর চাপ দিতে বলছেন।

ট্রাম্প ও পুতিন দুজনই একগুঁয়ে এবং নিজেদের পছন্দমতো কাজ করতে অভ্যস্ত। এখন দেখার বিষয়, কে পিছিয়ে আসেন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির লাগাম কার হাতে আসে। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে কূটনৈতিক সমঝোতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button