বিশ্ব

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর: নতুন ইতিহাসের সূচনা

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা একটি অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন, যা অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করার তিন মাস পর এই সাংবিধানিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি।

নতুন ইতিহাসের প্রত্যাশা

বৃহস্পতিবার সাংবিধানিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার সময় আল-শারা বলেন, “এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে। এর মাধ্যমে আমরা নিপীড়নের পরিবর্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব।”

সংবিধানের মূল বিষয়বস্তু

সংবিধান খসড়া কমিটির সদস্য আব্দুল হামিদ আল-আওয়াক জানান, নতুন সংবিধানে আগের সংবিধানের কিছু বিষয় বজায় থাকবে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য মুসলিম হতে হবে এবং আইনশাস্ত্রের প্রধান উৎস হিসেবে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আল জাজিরার সাংবাদিক রেসুল সেরদার দামেস্ক থেকে জানিয়েছেন, নেতাদের ধর্মীয় সম্পৃক্ততার ওপর আইন চালু করার প্রশ্নটি একটি ‘বিতর্কিত বিষয়’ ছিল। তিনি বলেন, “এ বিষয়টি সংবিধানের একটি ধারা হবে কি না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপ্রধানকে মুসলিম হতে হবে।”

মত প্রকাশ ও নারীদের অধিকার

আব্দুল হামিদ আল-আওয়াক আরও জানান, এই নথিতে মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং নারীদের ‘সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার’ নিশ্চিত করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিরিয়ার নড়বড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি ‘সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য’ বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য

নতুন সংবিধানে বেশির ভাগ মনোযোগ থাকবে অন্তর্বর্তী সময়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর। এর লক্ষ্য হবে পূর্ববর্তী বাশার আল-আসাদ সরকারের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা।

নির্বাহী ক্ষমতা ও গণপরিষদ

আল-আওয়াক উল্লেখ করেন, অস্থায়ী সংবিধানের অধীনে নির্বাহী ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টের হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে। অস্থায়ী সংবিধানে একটি গণপরিষদের কথা বলা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নিযুক্ত করবেন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত সব আইন প্রণয়নের দায়িত্ব এই গণপরিষদের হাতে থাকবে।

প্রেসিডেন্টের মতে, নির্বাচন হতে সম্ভবত চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। গণপরিষদের হাতে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতাও থাকবে। তবে এটি বাস্তবে অত্যন্ত কঠিন হবে, কারণ অনেক সদস্য সরাসরি রাষ্ট্রপতি নিজেই নিযুক্ত করবেন।

স্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন

স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তবে এটি সিরিয়ার রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতি গোষ্ঠীগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্ত করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে এবং দেশের সকল গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button