ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অস্বীকৃতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাঠানো চিঠির পরও পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি স্পষ্ট করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই এবং এটি শুধুমাত্র ভ্রান্ত জনমত তৈরি করবে।
ট্রাম্পের চিঠি ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেনশিয়াল উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশের মাধ্যমে একটি চিঠি পেয়েছে তেহরান। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, চিঠিতে এমন একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখবে এবং দেশটিকে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করবে।
তবে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, তিনি চিঠিটি দেখেননি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অর্থহীন হবে। তিনি বলেন, “যখন আমরা জানি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চুক্তির সম্মান করবে না, তাহলে এই আলোচনার কি কোনো মানে হয়?”
তিনি আরও বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র বা তার এজেন্টরা কোনো ভুল পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইরানের প্রতিক্রিয়া হবে চূড়ান্ত ও নিশ্চিত, আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র।”
ট্রাম্পের আগ্রহ ও অতীত চুক্তির ইতিহাস
ট্রাম্প প্রশাসন চাচ্ছে ইরানকে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে আনতে, যা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইরান একটি চুক্তি করেছিল, যেখানে ইরান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন এবং ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। তিনি একে “ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ চুক্তি” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, এটি ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রপতির অবস্থান
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যেসব হুকুম ও হুমকি দিচ্ছে, তা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। আমি আলোচনায় বসব না। আপনি যা খুশি করুন।”
পারমাণবিক কর্মসূচি ও আইএইএ-এর সতর্কবার্তা
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) সতর্ক করেছে যে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম পরিশোধন করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের কাছাকাছি।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বর্তমানে ইরান, রাশিয়া ও চীন বেইজিংয়ে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা করছে। এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে।
ট্রাম্পের সামরিক হুমকি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জবাবে ইরান কেমন প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, ইরান আপাতত মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যেতে আগ্রহী নয়।
ইরানের এই অস্বীকৃতি এবং ট্রাম্পের আগ্রহের মধ্যে একটি জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ এটি ভবিষ্যতে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।