বিশ্ব

ইসরায়েলকে থামাতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান ইরানের

সংঘাতের উত্তাপে ইরানের কূটনৈতিক আহ্বান

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইরান এখন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সোমবার এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে বলেন, যদি ট্রাম্প সত্যিকার অর্থেই কূটনৈতিক সমাধান চান এবং এই যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী হন, তাহলে তার পদক্ষেপের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হওয়া উচিত।

তেহরানের পক্ষে বার্তা হলো, ইসরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য করা হলেই মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের উত্তাপ কমবে। আর সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। আরাগচি বলেন, “ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোন কলেই নেতানিয়াহুর মতো কাউকে থামানো সম্ভব, যা কূটনৈতিক সমঝোতার দরজা খুলে দিতে পারে।”

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কূটনৈতিক কূটকচ্ছে

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ কাতার, সৌদি আরব এবং ওমানকে অনুরোধ করেছে তারা যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ প্রয়োগের ফলে ট্রাম্প ইসরায়েলের ওপর তার প্রভাব খাটিয়ে যুদ্ধবিরতি আনার জন্য কাজ শুরু করবেন বলে আশাবাদী ইরান। বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় নমনীয়তা প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এই কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের টানাপোড়েন কমানোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হতে পারে। কারণ, এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে পারমাণবিক ও সামরিক বিষয়ে ইরান ও পশ্চিমাদের মধ্যে গভীর অমত ছিল।

ইসরায়েল: “বিজয়ের পথে আমরা”

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক বিমানঘাঁটিতে দেয়া ভাষণে বলেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নেতানিয়াহুর দাবি, “আমরা বিজয়ের পথে রয়েছি। তেহরানের নাগরিকদের সতর্ক করে বলতে চাই, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সরে যান; আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইসরায়েল এখনো কূটনৈতিক সমঝোতার থেকে দূরে, বরং সামরিক বিকল্পে জোর দিচ্ছে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে জোরালোভাবে চাপ প্রয়োগ করছে।

সামরিক পরিসংখ্যান ও সাম্প্রতিক হামলা

ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিভিন্ন শহরে বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে এবং তা আরো জোরদার করেছে। পাল্টা জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তি প্রদর্শন করেছে। বিশেষ করে, ইরান সফলভাবে ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা তাদের সামরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য বলে ধরা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাপ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মধ্যপ্রাচ্যে এই নতুন দফার সংঘাত বিশ্ব রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তি ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সংঘাতকে দ্রুত থামানোর জন্য আন্তর্জাতিক কূটনীতির উপর জোর দিচ্ছে।

অন্যদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যে কিছু অংশ ইসরায়েলের শক্ত অবস্থান সমর্থন করলেও, দ্বিতীয় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয়, আমেরিকার অভ্যন্তরীণভাবেও ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে।

ইরানের কূটনৈতিক নমনীয়তার সম্ভাবনা

ইরানের পক্ষ থেকে যদি সত্যিই পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কিছু নমনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা শত্রুতা কমানোর ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা এবং সংঘাত নিরসনে রূপরেখা ঠিক করা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের আহ্বান ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের ইঙ্গিত দিলেও, ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ এবং নেতানিয়াহুর ‘বিজয়ের পথে’ বক্তব্য যুদ্ধবিরতি আনার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে, তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার গোপন আলোচনার ভিত্তিতে কূটনৈতিক ব্যবস্থার সম্ভাবনা এখনো জীবন্ত। যদি ট্রাম্প-প্রশাসন সক্রিয় হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করে, তবে অচিরেই এই সংঘাতের উত্তাপ কমে আসতে পারে।

কী পরবর্তী?

  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি ইসরায়েলের ওপর তার প্রভাব প্রয়োগ করে যুদ্ধবিরতি আনবেন?
  • ইরান কি পারমাণবিক কর্মসূচিতে নমনীয়তা দেখাবে?
  • মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শক্তিধর দেশ কাতার, সৌদি আরব ও ওমান কীভাবে কূটনৈতিকভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে?
  • ইসরায়েলের সামরিক অভিযান কি অব্যাহত থাকবে, নাকি শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হবে?

এসব প্রশ্নের উত্তর আগামী কয়েক সপ্তাহে বিশ্ব রাজনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button