বিশ্ব

সমুদ্র, আকাশপথে অস্ত্রবিরতি চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে সমুদ্র ও আকাশপথে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। জেলেনস্কি বলেন, এ অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে তিন বছর ধরে চলমান আগ্রাসন বন্ধে মস্কোর সদিচ্ছা যাচাই করা যাবে।

তবে জেলেনস্কির এই আহ্বানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সমুদ্র ও আকাশপথে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের হামলা ছিল চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র।

সম্মেলনে জেলেনস্কির বক্তব্য

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, “এই যুদ্ধের একমাত্র উৎস রাশিয়া। আমরা দেখতে চাই, তারা যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে কি না।” কিয়েভের প্রতি ইউরোপীয় সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়েও আলোচনা হয় সম্মেলনে।

সমুদ্র ও আকাশপথে অস্ত্রবিরতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জেলেনস্কি বলেন, “জ্বালানি ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা বন্ধ করা এবং ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও দূরপাল্লার ড্রোন হামলা বন্ধ করলেই আমরা বুঝতে পারব, রাশিয়া সত্যিই শান্তি চায় কি না। কৃষ্ণসাগরে কোনো সামরিক কর্মকাণ্ড না চালানোর মাধ্যমে সমুদ্রপথে অস্ত্রবিরতি নিশ্চিত করা সম্ভব।”

জেলেনস্কি আরও বলেন, “যুদ্ধবিরতির যেকোনো উদ্যোগই সমন্বিত চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।”

রাশিয়ার রাতভর হামলা

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাতভর ইউক্রেনের জ্বালানি ও গ্যাস স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। হামলায় চার শিশুসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন।

ওদেসা ও খারকিভের কর্মকর্তারা জানান, দফায় দফায় চালানো হামলায় বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন লেগেছে।

এদিকে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিমান হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি শত্রুর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে রাশিয়া রাতভর হামলা চালিয়েছে— এমন অভিযোগ নাকচ করেছে ক্রেমলিন। তবে, রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা যে ইউক্রেনের প্রতিরোধকে কঠিন করে তুলছে, তা স্পষ্ট।

সৌদি আরবে সম্ভাব্য আলোচনা

রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার সৌদি আরবে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। বৈঠকে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও সৌদি সফর করবেন বলে জানা গেছে। সেখানে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।

দেশের ভেতরেও চাপের মুখে জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বিরোধীদলীয় নেতা ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো ও পেট্রো পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীরা মনে করেন, জেলেনস্কির সরে দাঁড়ানো উচিত।

তবে বিরোধীদলীয় নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, হোয়াইট হাউসের কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারা যুক্ত নন।

ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কি?

জেলেনস্কির আহ্বান ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই যুদ্ধ সহসা শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো, সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা— সবকিছুই যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। তবে অস্ত্রবিরতির কোনো চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তা শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button