ফুটবলখেলা

ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালে মেডেল চুরি করেছেন ট্রাম্প

Advertisement

নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে ফুটবলের রোমাঞ্চ ছিল চরমে। কিন্তু ম্যাচ শেষের পর এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য গোটা দুনিয়ার নজর কেড়ে নেয়—সেটি কোনো গোল বা ট্রফি নয়, বরং একজন রাজনীতিবিদের ‘পকেট মারার’ অভিযোগ!

ট্রাম্প ও ট্রফির মঞ্চ: কী ঘটেছিল?

১৩ জুলাই, ২০২৫। ৩২ দলের প্রতিযোগিতায় আয়োজিত ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ইউরোপের শক্তিশালী পিএসজিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে চেলসি। খেলাটি দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ট্রাম্প চ্যাম্পিয়ন চেলসির খেলোয়াড়দের মেডেল পরিয়ে দেন এবং ট্রফি তুলে দেন অধিনায়ক রিস জেমসের হাতে।

ঠিক সেই সময়েই ঘটে ‘আলোচিত মুহূর্তটি’। ট্রাম্পকে একটি মেডেল নিজের ব্লেজারের পকেটে ঢোকাতে দেখা যায়। এই দৃশ্য ভিডিও হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনাটি নিয়ে শুরু হয় জল্পনা—ট্রাম্প কি চ্যাম্পিয়নদের জন্য বরাদ্দ মেডেলটি নিয়ে নিলেন?

ঘটনার পেছনের কাহিনি: আসলেই চুরি, না কি ভুল বোঝাবুঝি?

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অনেকেই ঘটনাটিকে কৌতুকের চোখে দেখলেও, অনেকে এটিকে ‘চুরির স্পষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যা দেন। বিশেষ করে কেউ কেউ লিখেছেন, “দ্য আর্ট অব দ্য স্টিল”—ট্রাম্প একটি চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল চুরি করে নিলেন!

তবে অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায়, ব্যাপারটি আসলে ততটা নাটকীয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিফা কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের জন্য আলাদা করে একটি মেডেল প্রস্তুত করেছিল। সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে দেওয়ার কথা ছিল অনুষ্ঠানের শেষে। তবে সময়ের সংকট এবং অনুষ্ঠানসূচির গড়মিলের কারণে ইনফান্তিনো ট্রাম্পকে ওই বিশেষ মেডেলটি তৎক্ষণাৎ দিয়ে দেন। সেই মেডেলটিই ট্রাম্প পকেটে রাখেন।

চেলসি শিবিরের প্রতিক্রিয়া: বিস্মিত হলেও বিব্রত নয়

চেলসির অধিনায়ক রিস জেমস বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প শুধু ট্রফি তুলে দিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করবেন। কিন্তু তিনি থেকে যেতে চাইলেন এবং আমাদের সবার সঙ্গে মুহূর্তটি উপভোগ করলেন।”

দলের হয়ে জোড়া গোল করা কোল পালমার বলেন, “আমি জানতাম ট্রাম্প মাঠে থাকবেন। কিন্তু ভাবিনি, উনি এতটা ইনভলভড হবেন। ট্রফি দেওয়ার সময়ও তিনি মঞ্চে ছিলেন।”

এইসব বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, চেলসি শিবির ঘটনাটিকে যতটা না ‘চুরি’ হিসেবে দেখছে, তার চেয়ে অনেক বেশি এটি দেখছে প্রটোকল ভাঙার একটি উদাহরণ হিসেবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের মেডেল পকেটে রাখার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা ও ট্রল। কেউ লিখেছেন, “ট্রাম্প শুধু রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তিনিই ছিলেন এক নম্বর ফ্যান।” কেউ আবার রসিকতা করে বলেন, “মেডেলটা নয়, ট্রাম্পের হৃদয় জিতেছে চেলসি।”

তবে কড়া সমালোচকরা ঘটনাটিকে মোটেই হালকাভাবে নেননি। একজন ফুটবলপ্রেমী লিখেছেন, “একজন রাষ্ট্রপতি, যিনি একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়নদের মেডেল নিয়ে চলে যান—এটি বিশ্বের জন্য দুঃখজনক দৃষ্টান্ত।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব পাচ্ছে ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা জোরদার হওয়ার এই সময়ে ট্রাম্পের এমন কোনো কর্মকাণ্ড প্রচারের আলোয় আসা অস্বাভাবিক নয়। যদিও ঘটনা আপাতভাবে নিরীহ এবং কৌতুকের মতো মনে হতে পারে, তবু রাজনৈতিকভাবে এর ব্যবহার হতে পারে দুদিকেই। ট্রাম্পপন্থীরা এটি “বিনোদনপ্রিয় ট্রাম্পের সরলতা” হিসেবে দেখালেও, বিরোধীরা এটিকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ” বলেই প্রচার করছে।

‘চুরি’ না ‘চ্যার্ম’? বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

ক্রীড়াবিশ্লেষক ও প্রটোকল বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ভিআইপি অতিথিকে ফিফা নিজস্বভাবে পুরস্কৃত করতেই পারে, যা এই ঘটনায় ঘটেছে। তবে একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য—মঞ্চে এ ধরনের আচরণ বিতর্ক সৃষ্টি করতেই পারে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে অতিথি নির্বাচন ও দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।

সারসংক্ষেপ  

ঘটনাটি নিয়ে এখনো নানা আলোচনা চলছে—কেউ দেখছেন সেটিকে নিছক বিনোদন হিসেবে, আবার কেউ মনে করছেন এটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের প্রোটোকল ভঙ্গের ঘটনা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে এক বিষয় নিশ্চিত—ক্লাব বিশ্বকাপের এবারের আসর শুধু চেলসির জয় বা পিএসজির পরাজয় নয়, স্মরণীয় হয়ে থাকবে ‘ট্রাম্পের মেডেল কাণ্ড’ দিয়েও।

এম আর এম – ০৩৯০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button