বিশ্ব

বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার বিষয়ে যা বলছে ভারত

Advertisement

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারতের স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রমে নতুন বার্তা দিল দিল্লি। ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ বাংলাদেশিদের এখন ভিসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দিল্লিতে সাপ্তাহিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান,

“আমরা বাংলাদেশে ভিসা দিচ্ছি। নানা কারণে ভিসা দেওয়া হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিসা দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষাগত প্রয়োজনসহ নানা কারণেই ভিসা দেওয়া হচ্ছে।”

তবে কতজন বাংলাদেশি সম্প্রতি এই সুবিধা পেয়েছেন, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিতে পারেননি তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এটা আমাকে জেনে বলতে হবে।”

কেন বন্ধ হয়েছিল ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম?

২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের দিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের ভিসা কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

এই বন্ধে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য ভারতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা হাজারো বাংলাদেশি নাগরিক।

সেই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটি ভারতের পক্ষ থেকে প্রথম কোনো ইতিবাচক বার্তা যা ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া

দিল্লির এই ঘোষণার পর বাংলাদেশের অনেক নাগরিক আশার আলো দেখছেন।
বিশেষ করে যারা চিকিৎসা বা উচ্চশিক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভিসা জটিলতায় ছিলেন, তারা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

ঢাকায় বসবাসরত একজন অভিভাবক বলেন,

“আমার ছেলের ভারতের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত, কিন্তু ভিসা না পাওয়ার কারণে আমরা স্থবির হয়ে পড়েছিলাম। এখন হয়তো সম্ভাবনা তৈরি হলো।”

ভিসার ধরণ ও চাহিদা

ভারতে সাধারণত বাংলাদেশিদের তিন ধরনের ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে—
১. পর্যটন ভিসা,
২. চিকিৎসা ভিসা,
৩. ছাত্র ভিসা

গত এক দশকে এসব ভিসার চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলোতে।

বিশেষ করে মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে অনেকেই কলকাতা, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আবেদন করে থাকেন।

পরিসংখ্যান ও তুলনা 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২২ সালে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪,৫০০–৫,০০০ ভিসা দেওয়া হতো, সেখানে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তা নেমে আসে মাত্র ১,২০০–১,৫০০-এ।

তবে সাম্প্রতিক ঘোষণার পর এই সংখ্যা আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো বিস্তারিত সংখ্যাগত তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে এর মাধ্যমে এক ধরনের ইতিবাচক সম্পর্কের ইঙ্গিতই মিলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নির্ভর করেই ভিসা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কি না, সেটি নির্ধারিত হবে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতেই মূলত এই প্রবাহ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

“আমরা বাংলাদেশে ভিসা দিচ্ছি, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দিচ্ছি”—রণধীর জয়সওয়াল, মুখপাত্র, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সারসংক্ষেপ  

দীর্ঘ কয়েক মাস ভিসা কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকার পর ভারতের পক্ষ থেকে আসলো স্বস্তির বার্তা। দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের এখন ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ ভিসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কত সংখ্যক ভিসা দেওয়া হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।

দীর্ঘদিন পর ভারতীয় ভিসা প্রসঙ্গে এমন আশাব্যঞ্জক বক্তব্য বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যত বাস্তবায়িত হলে তবেই এর প্রকৃত সুফল মিলবে।

তবে এখন প্রশ্ন—এই গতি ধরে রাখা সম্ভব হবে তো? ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাই দেবে সেই উত্তর।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button