শান্তি আলোচনা চাইলে হামলা বন্ধ করুন: পুতিনকে জেলেনস্কি

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে একের পর এক রুশ হামলার পর এবার পূর্বাঞ্চলীয় শহর ক্রামাতোরস্কে রাতভর ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলায় এক কিশোর নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন। টানা দুই দিন রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্রেমলিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, যদি আলোচনা করতে হয় তবে হামলা বন্ধ করতে হবে। ‘বিমান সন্ত্রাস’ বন্ধ করতেই হবে।
টানা ড্রোন হামলা: ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়
রোববার ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রুশ বাহিনী দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ৭৯টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটের দাবি, তারা এর মধ্যে ৬৩টি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মতে, রাশিয়া পরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে, যা সাধারণ নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
ক্রামাতোরস্কের মেয়র ওলেক্সান্দ্র গনচারেঙ্কো টেলিগ্রামে এক বার্তায় লিখেছেন, “শত্রুপক্ষের গোলাবর্ষণের কারণে আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক কিশোর নিহত হয়েছে এবং আরও দুজন আহত হয়েছে।”
এছাড়া, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে জাপোরিঝঝিয়ায় রাশিয়ার ড্রোন হামলায় আরও এক বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। স্থানীয় গভর্নর ইভান ফেদোরভ জানিয়েছেন, হামলার কারণে একটি আবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়, যার ফলে ভবনের ছাদ ধসে পড়ে এবং ৩০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
রাশিয়ার পাল্টা দাবি: সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলা
রাশিয়ার তদন্ত কমিটির প্রধান আলেকজান্ডার বাস্ট্রিকিন দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘তাস’-এ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৫২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জন শিশু রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে গত তিন বছরে চলমান যুদ্ধে হাজারো বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই ইউক্রেনীয়।
জেলেনস্কির বার্তা: শান্তি আলোচনার শর্ত
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেন একটি স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনের জন্য লড়াই করছে। আমরা ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চাই। কিন্তু রাশিয়া তা করতে চায় না, তারা তাদের বিমান সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “গত সপ্তাহে রাশিয়া আমাদের শহরগুলো ধ্বংস করতে এবং মানুষ হত্যা করতে এক হাজারেরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। সেইসঙ্গে ২০টির বেশি মিসাইল হামলাও চালিয়েছে।”
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিণতি
বিশ্ব নেতারা রাশিয়ার এই লাগাতার হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, “আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি। রাশিয়ার এই ধরনের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক নীতির গুরুতর লঙ্ঘন।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধের এই ক্রমবর্ধমান গতি শান্তি আলোচনাকে কঠিন করে তুলবে এবং মানবিক সংকট আরও প্রকট হবে।
এই যুদ্ধের অবসান কতটা সম্ভব, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন থেকে যায়। তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যদি রাশিয়া আলোচনায় বসতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব অপেক্ষায় রয়েছে, এই সংঘাত কী মোড় নেয় তা দেখার জন্য।