সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে: লন্ডন সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান

ইউক্রেন সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলন শেষে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, “সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা জরুরি।”
সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু
রোববার লন্ডনের ল্যানচেস্টার হাউসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং সম্ভাব্য নতুন জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের বৃহৎ পরিসরে অগ্রসর হতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার।”
ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের উত্তেজনা
লন্ডন সম্মেলনের কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই বৈঠকটি বাগ্বিতণ্ডায় রূপ নেয় এবং নির্ধারিত চুক্তি স্বাক্ষর না করেই শেষ হয়। সূত্র জানায়, জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলা হয়।
উরসুলা ভন ডার লিয়েন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে কেউই তার প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ করতে পারে না কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত পরিবর্তন করতে পারে না।”
যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
লন্ডনের এই সম্মেলনের আয়োজন করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, “আমরা তিন বছর ধরে চলমান সংঘাতের মধ্যে রয়েছি। এখন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে এগোতে হবে।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাজ্য ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং পরবর্তীতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান
সম্মেলনে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “নাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর আরও অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত।”
এর আগে শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্টারমার বলেন, “যতদিন প্রয়োজন হবে, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের পাশে থাকবে।” জেলেনস্কি জবাবে বলেন, “যুক্তরাজ্যের মতো বন্ধু পেয়ে আমরা গর্বিত।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন আরও জোরদার হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা আগামী দিনগুলোতে এই সংকটের গতিপথ নির্ধারণ করবে।