ভারতের চার প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ভারতের চার প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণ
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মূলত ইরানের পেট্রলজাত পণ্য বিক্রি ও পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুসারে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা চারটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হলো:
১. ফ্লুক্স মেরিটাইম এলএলপি ২. বিএসএম মেরিন এলএলপি ৩. অস্টিনশিপ ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড ৪. কসমস লাইনস ইনকরপোরেশন
এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কসমস লাইনস ইনকরপোরেশনকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইরানের পেট্রলজাত পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে। অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান ইরানের জ্বালানি তেল ও পেট্রলজাত পণ্য পরিবহনকারী নৌযানের বাণিজ্যিক ও কারিগরি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মার্কিন সরকারের ব্যাখ্যা
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ বিষয়ে বলেন, “ইরান নিজেদের জ্বালানি তেল বিক্রি বাড়ানোর জন্য একটি গোপন নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করছে। তারা বিভিন্ন নৌযান, পরিবহনকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করে। আমরা ইরানের এই অবৈধ তেল বাণিজ্য বন্ধ করতে আমাদের সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করব।”
তিনি আরও বলেন, “যে সকল প্রতিষ্ঠান ইরানের তেল পরিবহনে যুক্ত থাকবে, তারা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ, ইরানের ওপর আগে থেকেই কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”
ইরানের তেল বিক্রির চ্যালেঞ্জ ও নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার পরও ইরানের জ্বালানি তেল বাণিজ্য চলছে। ইরানের তেলবাহী ট্যাংকারগুলো বন্দর এলাকার বাইরে নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকা নৌযানে তেল সরবরাহ করছে। পরে এসব তেল বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব বাজারে ইরানের জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বিক্রির অর্থ ইরানের সামরিক বাহিনী এবং তাদের মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠানও নিষেধাজ্ঞার আওতায়
শুধু ভারত নয়, আরও কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠানও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
- হংকং
- চীনের কিছু প্রতিষ্ঠান
এছাড়া, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি এবং ইরানিয়ান অয়েল টার্মিনালস কোম্পানি নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর বেশ কিছু কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এতে:
- প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে যাবে।
- সম্পদ জব্দ করা হতে পারে।
- ব্যাংকিং ও মুদ্রা ব্যবহারে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। বিশেষত, ভারতীয় নৌপরিবহন খাতে এর প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার নীতি
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু দেশ হলো রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলার পর মস্কোর ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া:
- ইরান
- উত্তর কোরিয়া
- চীন সহ বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
উপসংহার
ভারতের চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দেশটির জ্বালানি পরিবহন খাতে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ও এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।ভারত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইরান, জ্বালানি বাণিজ্য