
ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে কলম্বিয়ায় জরুরি সম্মেলনে বসছে অন্তত ২০টি দেশ। ১৫-১৬ জুলাই এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও চীন। দ্য হেগ গ্রুপ ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই উদ্যোগের মূল আয়োজক।
সম্মেলনের আয়োজন ও উদ্দেশ্য
আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ইসরায়েলকে আনতে এবং ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় আগামী ১৫ ও ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
এই সম্মেলনের আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক জোট “দ্য হেগ গ্রুপ” এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও কলম্বিয়া সরকার। এতে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশসহ অন্তত ২০টি দেশ।
সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় হবে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক, আইনি এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ।
কারা যোগ দিচ্ছে এই সম্মেলনে?
দ্য হেগ গ্রুপ আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে:
বাংলাদেশ, চীন, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কিউবা, জিবুতি, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, লেবানন, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, তুরস্ক, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিনেস, উরুগুয়ে এবং ফিলিস্তিন।
এছাড়াও জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্যে রয়েছেন:
- ফ্রান্সেসকা আলবানিজ (UN Special Rapporteur, ফিলিস্তিন বিষয়ক)
- ফিলিপে লাজ্জারিনি (প্রধান, UNRWA)
- তলালেং মোফোকেং (বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অধিকার)
- লরা নাইরিনকিন্ডি ও আন্দ্রেস ম্যাসিয়াস (জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধি)
দ্য হেগ গ্রুপ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে গঠিত এই গ্রুপের মূল লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী রাষ্ট্রগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
প্রাথমিক সদস্য দেশগুলো হলো: বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, হন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্য হেগ গ্রুপ ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
এছাড়া মালয়েশিয়া ও নামিবিয়া তাদের বন্দরে ইসরায়েলগামী অস্ত্রবাহী জাহাজ ঢুকতে দেয়নি। কলম্বিয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পটভূমি
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
২০ লাখেরও বেশি মানুষ বর্তমানে গাজায় চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে।
এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে ক্রমশ ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
সম্মেলনের প্রধান বার্তা কী হতে পারে?
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেন,
“কোনো রাষ্ট্র আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো অপরাধ দায়মুক্তি পেতে পারে না।”
তিনি আরও জানান, এই সম্মেলনের মাধ্যমে একটি স্পষ্ট আন্তর্জাতিক বার্তা যাবে যে ফিলিস্তিনিদের ওপর সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই হবে।
বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ সরকার অতীতে বারবার ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“বাংলাদেশ সবসময় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সহিংসতা অনৈতিক ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
এই সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ন্যায়বিচারের প্রতি রাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে আরও সুদৃঢ় করে।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও লক্ষ্য
বিশ্লেষকদের মতে, বোগোতা সম্মেলন হতে পারে এক নতুন কূটনৈতিক মোড়।
একত্রে ২০টির বেশি দেশের সম্মিলিত পদক্ষেপ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়াতে পারে।
এই সম্মেলনের পর গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর ওপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মাধ্যমে।
“এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে একটা শক্ত বার্তা যাবে—ফিলিস্তিনের রক্ত বৃথা যাবে
সারসংক্ষেপ
কলম্বিয়ায় হতে যাওয়া এই বৈঠক বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে।
ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক একতা কতটা কার্যকর হতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বিশ্লেষকদের মতে,
“পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে, আন্তর্জাতিক আইন আদৌ কার্যকর হতে পারবে কি না।”
এম আর এম – ০৩২৮, Signalbd.com