বিশ্ব

ভারতীয় গণমাধ্যম বিকাতনের ওয়েবসাইট বন্ধের ঘটনায় সমালোচনার ঝড়

ভারতের তামিলনাড়ু ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘বিকাতন’-এর ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাতনের সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি ব্যঙ্গচিত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে শিকল পরা অবস্থায় দেখানো হয়। এই ব্যঙ্গচিত্রের প্রকাশের পর বিকাতনের ওয়েবসাইটে প্রবেশে সমস্যা দেখা দেয়, যা অনেকেই সরকার কর্তৃক নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

ওয়েবসাইট বন্ধের অভিযোগ এবং বিকাতনের প্রতিক্রিয়া

তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতারা এই ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ব্যঙ্গচিত্রটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি অবমাননাকর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ককে ছোট করার চেষ্টা করেছে। এরপরেই বিকাতনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না, যা সন্দেহজনকভাবে সরকারী হস্তক্ষেপের ফলস্বরূপ বলে অনেকের ধারণা।

তবে, বিকাতন কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইট বন্ধের বিষয়ে সরকার থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ‘বিকাতনের ওয়েবসাইট বন্ধ হওয়া বা কোনো ধরনের প্রবেশ সমস্যার পেছনে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা ছিল না।’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সরকারের পদক্ষেপ

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এই পদক্ষেপকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি হামলা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মূল স্তম্ভ, এবং এর ওপর এমন কোনো নিয়ন্ত্রণ সহ্য করা হবে না।”

বিশিষ্ট সাংবাদিক এন রামও সরকারের এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ সঠিক নয় এবং এটি সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য বিপজ্জনক।” এন রামের মতে, এই ব্যঙ্গচিত্রে মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের কূটনৈতিক গুরুত্বকে ছোট করা হয়নি বরং তা একটি নিন্দা প্রদর্শন ছিল।

বিকাতনের শত বছরের ইতিহাস এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

বিকাতন একটি প্রাচীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, যার ইতিহাস প্রায় এক শতাব্দী জুড়ে। তাদের মৌলিক নীতি হল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা, এবং তারা দাবি করেছে যে, সরকার তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করার পেছনে কোনো বৈধ কারণ দেখাতে পারেনি। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ সরকারের স্বেচ্ছাচারী আচরণের ইঙ্গিত দেয়, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার প্রতি অবমাননা।

বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিকাতনের ওয়েবসাইট বন্ধের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতি কে আন্নামালাই এই পদক্ষেপের নিন্দা করে বলেছেন, “এই ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে মোদির সফরের গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো হয়েছে। এটি সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘন করেছে।”

এছাড়া, ভারতের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং নাগরিক অধিকার সংস্থা সরকারকে এই পদক্ষেপের বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। তারা জানিয়েছেন, এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করতে পারে, যেখানে রাজনৈতিক কারণে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে।

মন্তব্য ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

বিকাতন গ্রুপের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইট বন্ধের বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, তারা বিষয়টি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিকাতন গ্রুপ স্পষ্ট করেছে যে তারা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে এবং তারা ভবিষ্যতেও এর পক্ষে কাজ করবে।

তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দল ভিসিকে সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘ফ্যাসিবাদী প্রবণতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সরকারের অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে।

এদিকে, বিকাতন গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় কোনো প্রকার ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। সরকারের এই পদক্ষেপের শাস্তি ও তদন্ত প্রক্রিয়া কী হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে বিষয়টি এখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

উপসংহার

বিকাতনের ওয়েবসাইট বন্ধের এই ঘটনা ভারতের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতা, এবং সরকারের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন তুলে ধরেছে। বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে বিরোধী দলের এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ, এটি স্পষ্ট করে যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা যে কোনও গণতান্ত্রিক সমাজের মৌলিক অধিকার। ভারতের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ক্ষেত্রে এই ঘটনায় আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button