বিশ্ব

অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার মরিশাসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রাভিন্দ জগুনাথ

মরিশাসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রাভিন্দ জগুনাথকে অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত কমিশন (এফসিসি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গতকাল রোববার মরিশাসের মধ্যাঞ্চলের মোকা ডিস্ট্রিক্টের মোকা ডিটেনশন সেন্টারে তাঁকে আটক রাখা হয়।

গ্রেপ্তারের পেছনের কারণ

এফসিসির মুখপাত্র ইব্রাহিম রোসায়ি জানিয়েছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে প্রাভিন্দ জগুনাথের বাসভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। এই অভিযানে ১১ কোটি ৪০ লাখ মরিশাস রুপি (প্রায় ২৪ লাখ ডলার) জব্দ করা হয়েছে। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রাভিন্দ জগুনাথের আইনজীবী রৌফ গুলবুল জানান, তাঁর মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আদালতে লড়াই করবেন।

নতুন সরকারের তদন্ত এবং প্রেক্ষাপট

গত নভেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর মরিশাসের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নবীন রামগুলাম জানিয়েছিলেন যে, আগের প্রশাসনের কিছু সরকারি খরচের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে এই খরচগুলো অডিটের আওতায় আনা হবে।

এই তদন্তের অংশ হিসেবে গত মাসে মরিশাসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নরকেও আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার মাধ্যমে তদন্ত আরও গভীরতর হলো।

প্রাভিন্দ জগুনাথের রাজনৈতিক জীবন

প্রাভিন্দ জগুনাথ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। তাঁর শাসনামলে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগও উঠে আসে। বিশেষ করে সরকারি প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

জনপ্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

প্রাভিন্দ জগুনাথের গ্রেপ্তারের খবরে দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তাঁর সমর্থকরা দাবি করছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। অন্যদিকে, বিরোধী দল এবং দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাগুলো মনে করছে, এটি দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই গ্রেপ্তার মরিশাসের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যদি প্রাভিন্দ জগুনাথ আদালতে দোষী প্রমাণিত হন, তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার চিরতরে শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে, তিনি যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারেন।

প্রাভিন্দ জগুনাথের গ্রেপ্তার মরিশাসের রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত এখন নতুন মোড় নিতে পারে। দেশটির জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল নজর রাখছে, এই মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়। আগামী দিনে মরিশাসের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও পরিবর্তনের দিকে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button